হামাস ইসরাইল যুদ্ধ
পিএলও কি
PLO হলো Palestine Liberation Organization.
১৯৬৭ সালে যুদ্ধে শুরু হওয়ার সংলগ্ন সময়ে ফিলিস্তিনের গোষ্ঠীগুলো মিলিত হয়য়ে গঠন করে PLO। PLO যে কটি দল ছিলো তারমাঝে সবচেয়ে বড় দল ছিল ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ। পিএলও প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এর বাহিনী ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করে। প্রথমে পিএলও হামলা চালায় জর্দান থেকে। এরপর হামলা চালায় লেবানন থেকে।
অসলো শান্তি চুক্তি কি?
১৯৯৩ সালে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসলো শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি ছিল দুপক্ষের মধ্যে প্রথম শান্তি চুক্তি।
ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নানা ধরণের টার্গেট লক্ষ্য করে এই হামলা চালায়। ইউরোপেও ছিল কিছু টার্গেট। বিমান, দূতাবাস থেকে শুরু করে ইসরায়েলি অ্যাথলীটদের ওপর হামলা চলে।
ফিলিস্তিনিরা একের পর এক ইসরায়েলিদের নানা বস্তুকে টার্গেটে হামলা চালায়। আর ইসরায়েল আবার এর পাল্টা জবাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছিলো। দুপক্ষের মাঝে এই যুদ্ধ চলে বহু বছর ধরে।
এরপর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৩ সালে PLO এবং ইসরায়েল একটি শান্তি চুক্তিতে সই করে। যা অসলো শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত এটি। পিএল সন্ত্রাসবাদের এবং সহিংসতা র আন্দোলন পরিহার করে এবং তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে শান্তির অঙ্গীকার করে। হামাস কখনোই এই অসলো শান্তি চুক্তি মানেনি।
অসলো চুক্তি অনুসারে ইসরায়েল অঙ্গিকার করে যে তারা ফিলিস্তিনিদের ভূখন্ডে থেকে তাদের দখলদারিত্বের অবসান ঘটাবো।তারা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ইসরায়েল কখনোই এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা উল্টো দখলকৃত অধিকৃত এলাকায় ইহুদী বসতি গড়ে তোলো।
ইন্তেফাদা কি?
ইন্তেফাদা শব্দটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রকম্পন,আলোড়ন, আন্দোলন,
গণঅভ্যুত্থান, সংগ্রাম।
৮০ এর দশকের শেষের দিকে প্যালেস্টাইনরা ইসরায়েলের শোষন নিপিড়ন থেকে মুক্তির জন্য,তাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে আন্দোলন সংগ্রাম সূচনা করে ইতিহাসে তা ইন্তিফাদা নামে পরিচিত।
প্রথম ইন্তিফাদার সূচনা হয়েছিলো ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলিদের শোষন নিপিড়ন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিদ্রোহের মাধ্যমে।প্রথম ইন্তিফাদার সময়কাল হিসেবে চিন্হিত করা হয়।
১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ সম্মেলন পর্যন্ত।
প্রকৃতপক্ষে প্রথম ইন্তিফাদার সমাপ্তি হয়েছিলো ১৯৯৩ সালে। অসলো চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম ইন্তিফাদার সমাপ্তি হয়েছিলো।
১৯৪৮ সালে ১৪ মে প্যালেস্টাইনে ইসরাইলের জন্ম হয়। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই ইসরায়েল প্যালেস্টাইনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আক্রমণের শিকার হতে থাকে। ইসরাইলের সাথে আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক থাকায় আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব আক্রমণে সুবিধা করতে পারে নি।বরং ১৯৪৮, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদেশ গুলো ইসরায়েলের নিকট পরাজিত হয়।
প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল মধ্যকার দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন ঘটনার প্রবাহ, PLO এর বাধাদান আন্দোলন এবং আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার রাজনৈতি পরিস্থিতির উঠানামা ইন্তেফাদা গঠনের অন্যতম কারণ। ১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বের ফিলিস্তিনে যে স্বাধীনতা আন্দোলন চালছিলো সে স্বাধীনতা আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানের রূপ দানের জন্য গঠিত হয় ইন্তেফাদা। ইন্তেফাদা গঠনের কারেণে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি নতুন নেতৃত্ব লাভ করে। ইন্তিফাদা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করতে সক্ষম হয়। ৯ ডিসেম্বর জাবালিয়া এলাকায় শরণার্থী শিবিরে একটি বেসামরিক গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর গাড়ির আঘাতে ৪ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়।এর পর এই ঘটনার প্রতিবাদের শুরু হয় বিদ্রহ। এই ঘটনা থেকে গড়ে উটে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্যে ছিল সাধারণ ধর্মঘট, গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বেসামরিক প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্জন, অর্থনৈতিক ভাবে বয়কট, ইসরায়েলি নানা প্রকারের পণ্য প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি।প্রথম ইন্তিফাদার ফলে অনেক বিষয়ের পরিবর্তন হয়েছিলো।ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতিবাদী হয়ে ছিলো এই প্রথম ইন্তিফাদার ফলে।ফিলিস্তিনে ইন্তিফাদার ফলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছিলো তার মাঝে অন্যতম হলো ‘হামাস’ প্রতিষ্ঠা। হামাসকে প্রথম ইন্তিফাদার ফসল বললেও ভুল হবে না।
হামাস কি?
হামাসের প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম
বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে আলোচিত যে কয়টি রাজনৈতিক দল রয়েছে তার মাঝে অন্যতম হল হামাস
মিশরের বর্তমানে নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিন শাখা দল হিসেবে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের গাজা শহরে প্রতিষ্ঠিতহয় ‘ফিলিস্তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড’ যা বর্তমানে হামাস নামে পরিচিত।
এই দলটি প্রতিষ্ঠা করে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলো তাদের মাঝে শেখ আহমেদ ইয়াসিন, আব্দুল আজিজ রানতিস্সি, মাহমুদ জহর, ইব্রাহিম কুকা, মোহাম্মদ তা’হা অন্যতম।তৎকালীন সময়ে শেখ ইয়াসিন কে প্রধান করে এই দলটি প্রতিষ্টিত হয়।
শেখ ইয়াসিন ২০০৪ সালের ২২ ই মার্চ গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর টার্গেট কিলিং এ মারা যান।
পরবর্তী সময়ে দলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হরকাতুল মুক্বাওয়ামাহ্ আল ইসলামিয়া, যার ইংরেজি অনুবাদ করেলে এর অর্থ দাঁড়ায় Islamic Resistance Movement বাংলায় যার সরল অর্থ অর্থ দখলদার ইসরাইলী ইহুদিদের বিরুদ্ধে ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন।
এই দলটির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা, ইসরাইল যে শোষণ,নির্যাতন দখলদারিত্ব দীর্ঘকাল যাবত চালিয়ে আসছে তার অবসান ঘটানো, ইসরাইল রাষ্ট্রের ধ্বংস এবং ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত সমস্ত ভূমি উদ্ধার করে পুরো একটি ইসলাম রাষ্ট্র গঠন করা।
হামাসের তিনটি বিভাগ রয়েছে
নং | বিভাগ নাম |
১ | সামরিক বিভাগ |
২ | সমাজসেবা |
৩ | সামরিক বিভাগ |
১৯৯৩ সালে দলটি হামাস আল কাসাম নামে একটি নিজস্ব মিলিটারি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে মিলিটারি সংগঠনটিতে নিবন্ধিত ২০ হাজার সেচ্ছাসেবী যোদ্ধা রয়েছে যারা অবৈতনিক তারা কোনো বেতন নেয় না। বর্তমানে এই ব্রিগেডের প্রধান হলেন মোহাম্মদ দিয়েফ। এই দলটির প্রধান আয়ের উৎস হলো সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় দেওয়া অনুদান,বিভিন্ন সংস্থার অনুদান।তাছড়া দলটি ইরান লেবানন, বাহরাইন সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরব কুয়েত রাশিয়া ফ্রান্স জার্মানি কাতার থেকে বিভিন্ন খাতে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকে।
হামাস বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া তাদের বৈদেশিক অনুদান গুলো কঠোর ভাবে প্রতিটি খাত অনুযায়ী অনুযায়ী খরচ করে থাকে। অর্থাৎ সমাজ সেবা খাতে পাওয়া একটি টাকাও সামরিক খাতে ব্যয় করেনা এবং অনন্য খাতেও হামাস একই নীতি অবলম্বন করে।হামাস বার্তমানে গাজা অঞ্চলের শিক্ষা খাত, চিকিৎসা খাত সহ নানা খাতে এবং অবকাঠামো নির্মাণে ফিলিস্তিন সরকারের মোট বার্ষিক অনুদানের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অর্থ দলটি নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করে।
দলটির বার্ষিক বাজেট প্রায় ৮২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রায় ৮০% অর্থের জোগান আসে দেশের বাইরে থেকে।
তাছাড়া দলটি আল আকসা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের ২০% শেয়ার, গাজা অঞ্চলে বিভিন্ন ব্যবসা থেকে দলটি আয় করে থাকে।
হামাস দলটির সবুজ রংয়ের উপর সাদা কালিতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্’ লেখা সম্বলিত একটি পতাকা রয়েছে যা এই দলটির প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
হামাস ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে।পরবর্তীতে দলটির বর্তমান নেতা ইসমাইল হানিয়া’র নেতৃত্বে হামাস সরকার গঠন করে।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক নানা মহলের চাপ এবং অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে অল্প কদিনের মাথায় হামাস সরকার ভেঙে যায়।হামাস সরকার মাত্র এক বছরের মত স্থায়ী হয়েছিলো।হামাস জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারি দল হলেও পৃথিবীর অনেক দেশ হামাসকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে আখ্যায়িত করে যা বৈদেশিক অনুদান, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ও নানা খাতে আর্থিক সহায়তা পেতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে হামাস সরকার বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে নি।
হামাস কে যেসব দেশ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অবহিত করেছে তাদের মাঝে অন্যতম হলো জাপান,যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি সদস্য দেশ, ইসরাইল এবং কানাডা।
নিউজিল্যান্ড প্যারাগুয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য হামাস কে সরাসরি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অবহিত না করলেও হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডকে’সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অবহিত করেছে।
চীন রাশিয়া সিরিয়া ব্রাজিল ইরান নরওয়ে তুর্কি মিশর কাতার এই দেশ গুলো অফিসিয়ালি ঘোষণা দিয়েছে যে হাৃাস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়।তারা হামাসকে কোন ভাবেই মনে করেনা যে এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
জাতিসংঘ ২০১৮ সালে হামাস কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে।
হামাস বর্তমানে গাজা শহর টি নিয়ন্ত্রণ করে।এই সংগঠন টি এখনো ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সর্বশেষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট ২০২১। এটি ২০২১ সালের ২১ শে মে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ফলে এর সমাপ্তি ঘটে।
আরো পড়ুন ইহুদিদের ইতিহাস ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম

Hi,
I am Hossain Rakib. I have been writing on Jibhai for about 1 year. This is my site and I am a part of Jibhai.
Thanks