সোনালী দুঃখ বই রিভিউ
বইয়ের নাম | সোনালী দুঃখ |
লেখক | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ১০৪ |
মূল্য | ২০০৳ |
পশ্চিম জগতের এক প্রেম কাহিনি সোনালী দুঃখ। প্রেম সৃষ্টিজগতের এক অদ্ভুত অনুভূতি। বিরহরসে পরিপূর্ণ প্রেম।প্রেমে আছে নিশ্চিত বিরহ, তবুও সবাই সেই বিরহকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয়। কি অদ্ভুত লীলাখেলা দুনিয়ার।সোনালী দুঃখ এমনি এক প্রেম কাহিনি। সোনালী দুঃখ মূলত কাহিনির প্রেমিক প্রেমিকার নাম। সোনালী প্রেমিকার নাম আর দুঃখ এক অভাগা প্রেমিকের নাম।
ঘটনার বিবরণ :রাজকুমার জন্মের আগেই তার বাবাকে হারান।জন্মের সময় মাকেও হারান। বেচারা রাজকুমারের নাম তখন থেকে দুঃখ।নামের গুণাগুণ আজীবন বহন করে গিয়েছে দুঃখ।দুঃখই যেন তার চিরসাথী।
রাজকুমার নিজের রাজত্ব ছেড়ে চলে যায় মামা মার্কের রাজত্বে। রাজা মার্কের রাজত্বের রক্ষা কবজ হয়ে যায় দুঃখ।রাজা মার্ক ও দুঃখকে ভিষণ ভালোবাসে। রাজা মার্কের জন্য নিজের জীবন বাজি ধরে সব যুদ্ধজয় করতে থাকে দুঃখ।ভালোই যাচ্ছিল সব। হঠাৎ একদিন রাজা মার্ক পাখির মুখ দিয়ে নিয়ে আসা সোনালী চুল দেখে অতি উৎসাহী হয়ে ঘোষণা করেন, এক সোনালী চুলের মেয়েকেই তিনি বিয়ে করতে চান। রাজার মনোবাঞ্ছা পূরণ করার জন্য সোনালী চুলের মেয়ের খোঁজ করতে নামে দুঃখ।শেষে সোনালী চুলের মেয়ের খোঁজ ও পান দুঃখ। কিন্তু নিয়তির কি নীতি সোনালী দুঃখ পরস্পর পরস্পরের প্রতি প্রেমে অকুল ব্যকুল হয়ে উঠে। কিন্তু দুঃখ রাজা মার্কের প্রতি এই অবিচার কিছুতেই করতে পারবে না। বুকে পাথর বেঁধে দুঃখ সোনালীকে রাজা মার্কের হাতে তুলে দেয়। রাজা মার্ক ও সোনালীর বিয়ে হয়ে যায়।রাজা মার্ক তো ভিষণ খুশি। কিন্তু অন্তরে দুঃখে বিরহে তিলে তিলে শেষ হতে শুরু করে সোনালী আর দুঃখ।শেষে আর সহ্য করতে না পেরে সোনালী আর দুঃখ গোপনে দেখা করতে থাকে।রাজার এসব কাহিনি জানতে দেরি হয় নি। রাজা ক্রমশ ভয়াল ক্রোধে দুঃখকে মৃত্যুদন্ড দেয় আর রাণীকে কুষ্ঠরোগীদের হাতে সমপর্ণ করে দেয়।দুঃখ নিজে পলায়ন করে এবং রাণীকে কুষ্ঠরোগীদের হাত থেকে রক্ষা করে বনবাসে চলে যায়।সুখে শান্তিতেই থাকতে শুরু করে দুঃখ সোনালী।
রাজকুমারী বনে বাদাড়ে ছেঁড়া কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়।দুঃখ ভাবে তার জন্যই রাজকুমারীর এত দুঃখ।রাজকুমারী তো মহাসুখেই ছিল রাজপ্রাসাদে।অন্যদিকে রাণী সোনালী ও ভাবে তার জন্যই দুঃখের এত দুঃখ।দুঃখ হলো বীর,বীরবেশে ঘুরে বেড়ানোর কথা রাজ্যে।কিন্তু সোনালীর ভালোবাসার জন্য দুঃখ সব ত্যাগ করে জঙ্গলে পড়ে রয়েছে শোচনীয় ভাবে।
দুঃখ সোনালীর এমন দুঃখ আর সোনালীও দুঃখের এমন কষ্ট সইতে না পেরে রাজার নিকট সমপর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজা আপনমনে রাণীকে গ্রহণ করে। আবার শুরু হয় রাজার সুখের দিন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাণী আর দুঃখের অন্তর তচনছ হতে শুরু করে। বেঁচে থেকেও যেন মৃত।সোনালী দুঃখের প্রেম কাহিনি কিভাবে শেষ হয়, তাদের কি পূর্ণতা পায় নাকি অপূর্ণই থেকে যায় তাদের প্রেম পাঠকমনে উদগ্রীব হওয়া খুব স্বাভাবিক।
কষ্টের হলেও সত্যি যে সোনালী আর দুঃখের প্রেম পূর্ণ না হলেও তারা কিন্তু এক হতে পেরেছিল। এক হয়েছিল তবে এই মায়ার জগতে না,এক হয়েছিল দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে।
দুঃখের শরীরে থাকা বিষ সোনালী ঠোঁট দিয়ে নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দুঃখের সাথে নিজের জীবন বিলীন করে দেয়।

পাঠক,লেখক,বিতার্কিক,মুক্তমনা জ্ঞানপিপাসু।