সৃষ্টির সেরা জীব নাকি সেরা কীট?
ইসলাম ধর্মে মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত কিংবা সৃষ্টির সেরা জীব। ইসলাম ধর্ম বাদেও প্রত্যেক ধর্মেই মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়েছে।উপাধিটা শোনার পর মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।আচ্ছা, আমরা কী শুধু উপাধিতেই সৃষ্টির সেরা জীব?
নাকি আমাদের কর্মগুলো কীটের মতো?
না এ কীট ফসলের না,এরা হচ্ছে সামাজিক কীট!হ্যাঁ, আমি ঠিকই বলছি ।”সামাজিক কীট” !
একটা সময় ভাবতাম যারা স্কুলের গন্ডিতে কখনো পা রাখতে পারেনি কিংবা তথাকথিত কয়েকটা সনদ অর্জন করতে পারেনি তারাই বোধ হয় কীটের মত কাজ করে।পরিবেশ নোংরা করে। মনে হতো এরা অশিক্ষিত, এদের জ্ঞান দেয়া মানেই বিদ্যেধরী বাবু মশাইয়ের সাঁতার না জানার মতই কথাগুলো ষোল আনাই বৃথা! ধারণাটা যে নিতান্তই ভুল ছিলো তা বুঝেছি কয়েকজন সনদ অর্জনকারী তথাকথিত শিক্ষিতদের সাথে চলতে গিয়ে।বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা খুব কাছের তাদের সাথে চলতে গিয়ে দেখতাম এদের অনেকেই বাদাম খেয়ে বাদামের খোসাটা,কাগজের ঠোংগাটা,চিপসের প্যাকেট যেখানে খাওয়া শেষ হতো সেখানেই ফেলতো। অথচ দু কিংবা তিন পা এগোলেই ডাস্টবিন ছিলো।যদি তাদের কে বলতাম কেন তারা রাস্তায় ফেললো? তারা হেসেই উড়িয়ে দিতো।আবার কেউ একজন বলে উঠতো , “আমি রাস্তা নোংরা না করলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের চাকরি থাকবে না!তাদের সংসার তো এগুলো পরিষ্কার করেই চলে ,তাই নয় কি?”
আমরা মেয়েরা এখন নান্দনিকতায় বিশ্বাসী কিংবা অনুসারী।
নান্দনিক ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসিয়ে দিচ্ছি।অথচ এমনি এক বন্ধুকে দেখতাম ওয়ান টাইম কাপে চা খাওয়ার পর কাপটা ছুড়ে ফেলতো রাস্তায়। উঠোতে বললে বলতো এটা আমার কাজ না।আমি প্রকৃতিপ্রেমী একজন মানুষ , সজ্ঞানে কখনো ফুল, পাতা ছিড়েছি কি না মনে পরে না। আর আজকালকার এসব নান্দনিকতায় বিশ্বাসী নারীরা ছবি তোলার জন্য হুট করে একটা ফুল ছিড়ে কিছুক্ষন পর পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে যায়!তখন এদেরকে আমার নিতান্তই কীট মনে হয়।
কীট যেমন ফসল খেয়ে তার ক্ষতি করে, এরাও তেমন নিজেরা খেয়ে উচ্ছিষ্ট দিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে। আমরা অনেকটা ভূমিহীন ভূস্বামীর মত। ভূমি নেই কিন্তু ভাবটুকু ষোল আনা ভূস্বামীর মতো। ঠিক তেমনি আমরা উপাধিতেই আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব কিন্তু কর্মে ঐ যে কীটপতঙ্গের মতোই!
শাররিন আহমেদ
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়