সল বেলো সীজ দ্য ডে
বই রিভিউঃ সল বেলো সিজ দ্য ডে (দিবাহরণ)
অনুবাদঃ জীবিতেষ চন্দ্র বিশ্বাস
সল বেলো জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৫ সালে,কুইবেকের এক রাশিয়ান পরিবারে।সীজ দ্য ডে তার বিখ্যাত উপন্যাস যার প্রকাশকাল ১৯৬৫ সালে।তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসে দুর্বিসহ নাগরিক জীবনে অতিষ্ঠ মানুষ আর পতিত মানবতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়।১৯৭৬ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান।
সীজ দ্য ডে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র টমি উইলহেম।বয়স চল্লিশোর্ধ্ব। বয়স টা মোটেই নায়কোচিত নয়।তার স্মৃতির ভার,অতীতের ব্যর্থতা, বর্তমানের গ্লানি আর অব্যক্ত বেদনায় জর্জরিত একটি মাত্র দিনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
তার পিতা এ্যাডলার।হোটেলে একই ছাদের নীচে বসবাস করলেও তাদের বসবাস সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে।
পেশাগত সাফল্যের কথা যদি ধরা যায় তাহলে সাফল্যের চুঁড়ার সর্বোচ্চ শিখরে তাঁর অবস্থান।নিউইয়র্কের নাম করা ডাক্তারদের একজন তিনি।কিন্তু তার ছেলে হয়ে টমি চূড়ান্ত ব্যর্থ।একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তে তার জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে।প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত তার বাবার বিরুদ্ধে নিয়েছে, এবং প্রতিবার ই ঠকেছে।
বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হলিউডে পাড়ি দিয়েছিল।সেখানেও চূড়ান্ত ব্যর্থ।
বিবাহিত জীবনেও অসুখী। একটু শান্তির আশায় ছটফট করে টমি।হঠাৎ একদিন ডাক্তার টামকিনের সাথে পরিচয়। টামকিনের সাথে কথা বলে টমির মনে হল এতদিন টামকিন কেই খুঁজে চলছে সে।টামকিনের সাথে ব্যবসায় নামে সে।এইবার ও টমির বাবা সাড়া দেয় নি টমির এই সিদ্ধান্তে।কিন্তু টমি তার বাবা কে উপেক্ষা করে টামকিনের সাথেই ব্যবসা করতে নামে।টমি মনে করে রবিনসন ক্রুসো বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ভুল কিছু করে নি।রবিনসন ক্রুসো যেমন নিজের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছে তেমনি সেও করবে নিজের ইচ্ছে মত।কিন্তু টমি জানে না বাস্তবতা অনেক কঠিন।বাস্তবে সফল হতে গেলে বাস্তববাদী হতে হয় তার বাবার মত।অন্যদিকে যখন তার ব্যবসায় ভরাডুবি তখনই টামকিন তাকে রেখে পালিয়ে যায়।
বার বার নিজের ইচ্ছে মত চলে ব্যর্থ হওয়ার পরে আর কোথাও যাওয়ার থাকে না টমির।
তার বাবার কাছে যাবে কোন মুখে।টমি যে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সব কাজ করে আর প্রতিবার ই ব্যর্থ হয়।তাও টমি তার বাবার কাছে যায় মনের কষ্ট গুলো ভাগ করে নিতে।কিন্তু তার বাবা টমির দুঃখগুলো বুঝতে আর চায় না।কারণ তার ছেলে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চলে।টমি একটু শান্তির জন্য বাবার কাছে গেলেও আর ও মর্মাহত হয়ে ফিরে আসে।এদিকে তার স্ত্রী ও কল করে বলে টাকা পাঠাতে।তাদের দুই সন্তান এর জন্য। টমি তার স্ত্রী কে ভালো না বাসলেও তার সন্তানের জন্য টাকা পাঠাতে চেষ্টা করে।কিন্তু কিভাবে টাকা পাঠাবে।তার যে টাকা নেই।টামকিন তো তার সাথে প্রতারণা করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।টমি একটু শান্তির জন্য তার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করতে চায়।কিন্তু তার বিবাহিত বউ কে কিভাবে ডিভোর্স দিবে সেই টাকাও তো তার কাছে নেই।জীবন নিয়ে সে চূড়ান্ত ব্যর্থ।
টমি চেয়েছিল রোমান্টিক জীবন এক জীবন কাটাতে।বাট রোমাঞ্চের দেখা সে কখনো পায় নি, আর পাবেও না মনে হয়।
এসব ভেবে পথে হাটতে হাটতে সে হঠাৎ খেয়াল করল এক মৃত লোককে সবাই মিলে সুন্দর করে নিয়ে যাচ্ছে। একটু দূরে দাড়িয়ে টমি এটা দেখতে লাগল আর কাঁদতে লাগল।বছরের পর বছর তার মনে জমা হওয়া কষ্ট চোখের পানিতে ঝরে পড়তে লাগল।দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগত সে।তার কান্নায় দুঃখ, যন্ত্রণা, সব আকাক্ষা ডুবে যেতে লাগল।
এই ছিল সীজ দ্য ডে উপন্যাসের কাহিনি। কাহিনির শেষে টমি মৃত লোকের মৃত্যু দেখে নিজের একটা রোমাঞ্চকর মৃত্যুর সপ্ন দেখে সে।এভাবেই টমির মধ্যে ধীরে ধীরে জন্ম হয় অন্য এক টমির।
অনুবাদঃ জীবিতেষ চন্দ্র বিশ্বাস মূল্যঃ ৭০ টাকা
সাদিয়া আফরিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো জানুন
ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাস রিভিউ
আরণ্যক উপন্যাস রিভিউ বাংলা উপন্যাস

পাঠক,লেখক,বিতার্কিক,মুক্তমনা জ্ঞানপিপাসু।