মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা এক কিংবদন্তির নাম।অনেকের মধ্যেই ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি।আবার কেউ কেউ বলেন ক্লিওপেট্রা এমন কিছু রূপবতী ছিলেন না তিনি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর ক্ষমতার কারণে।ইতিহাসে ক্লিওপেট্রার কে নিয়ে যত মাতামাতি আর আলোচনা হয়েছে তার সমসাময়িক আর কোন মহিলাকে নিয়ে এর সাত ভাগের এক ভাগ আলোচনা হয়নি।

ইতিহাসের এই মহীয়সী নারী ক্লিওপেট্রা কে নিয়ে রয়েছে আমাদের আজকের আয়োজন।
ইতিহাসে মিশরের রানী বলে পরিচিত ক্লিওপেট্রা মজার ব্যাপার কি জানেন?
তিনি কিন্তু জন্মসূত্রে মিশরীয় ছিলেন না প্রাচীন গ্রিস বা মেসিডোনিয়ার রাজা মহান আলেকজান্ডারের সেনাপতি ছিলেন টলেমি খ্রিস্টপূর্ব 323 সালে আলেকজান্ডার মারা গেলে তার অন্যতম সেনাপতি টলেমি মিশরে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।সেই টলেমী রাজবংশী উত্তরসূরি ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তিনি ছিলেন ১২ টলেমীর কন্যা। ইতিহাসে তার মায়ের পরিচয় নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না।টলেমি দাস বংশের শেষ শাসক ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিশরের 300 বছরের মেসিডোনিয়ান শাসনের পতন ঘটে। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বা যৌনসম্পর্ক প্রাচীনকালে খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না।

ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিশেষত ভাইবোনের মধ্যে বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু মিশরীয় সভ্যতায় এমন উদাহরণ ছিল খুব বেশী।মিশরীয় লোককথায় দেবতা ওরিসিস তার বোন আইসিএস কে বিয়ে করেছিল রাজকীয় রক্তের শুদ্ধতা রক্ষার অভিপ্রায়। মিশরীয় শাসক যাদের বলা হতো ফারাও।তাদের মধ্যেই সব দেবতাকে আদর্শ মান ত দেবতাদের অনুকরণ করে তাদের মধ্যেও রক্তের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে শাদীর চলছিল।এরই ধারাবাহিকতায় ক্লিওপেট্রার বিয়ে হয়েছিল তার নিজের ছোট দুই ভাইয়ের সাথে এবং অনেক ইতিহাস বিদের ধারণা ক্লিওপেট্রার মা আর বাবা ছিলেন নিজের দুই ভাইবোন।
যুগ যুগ ধরে ক্লিওপেট্টা কে সুন্দরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয় কিন্তু ক্লিওপেট্রা কি সত্যিই ততটা সুন্দরী ছিলেন যতটা কল্পনা করা হয়।
2007 সালে মাটি খুঁড়ে ক্লিওপেট্রার আমলের একটি মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়। অতীতে ক্লিওপেট্রার একটি প্রতিকৃতি আঁকা ছিল যেটা থেকে দেখা যায় সাদামাটা মহিলাদের মতই দেখতে ছিলেন। সাধারণ সুন্দরী মহিলাদের মত সুন্দরী ও তিনি ছিলেন না সম্ভবত।মুদ্রার প্রতীক তিথিতে দেখা যায় তিনি ছিলেন খানিকটা পুরুষালি আর কঠিন চেহারার এক মহিলা। বিভিন্ন সিনেমা গল্পে তার অসাধারণ রূপ-লাবণ্য বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আসলে কল্পনাপ্রসূত। গ্রিট বাদে আর কোন ভাষা টলেমি সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো কিনা তা বলা কঠিন কিন্তু সাম্রাজ্যের রানী ক্লিওপেট্রার শাসিত প্রায় সকল রাজ্যের ভাষা জানতেন। তিনি আরোব বিরোধী পার্থিয়ান সিরিয়াল ইথিওপিয়ান এমন অনেক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।তিনি ছিলেন টলেমি সাম্রাজ্যের একমাত্র শাসক যিনি মিশরীয়দের নিজস্ব ভাষা শিখেছিলেন। তিনি নিজেকে একজন মিশরীয় বলে পরিচয় দিতেন।

মিশরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক মিশরীয়দের ঐতিহ্যবাহী উৎসব অনুষ্ঠানগুলোতে ভাজি থাকতেন।তিনি এভাবে মেসিডোনিয়ান টলেমি বংশের উত্তরসূরি ক্লিওপেট্রা হয়ে উঠেছিলেন মিশরীয় রানী।মিশরীয়রা তাকে একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক বলে বিশ্বাস করত। মিশরীয় সাম্রাজ্যের রীতি ছিল কোন একজন নয় এক সময় একসাথে দুজন শাসকের জোট বেঁধে রাজ্য শাসন করতে হতো সময় দু’জন ফারাও সাম্রাজ্য শাসন করতো একজন প্রধান শাসক এর সাথে একজন সহ শাসক থাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল।সেই সহ শাসক হতে হতো আবার বিপরীত লিঙ্গের। 51 খ্রিস্টপূর্বাব্দে পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে ক্লিওপেট্রা তার পিতার সাথে মিলে শাসক হিসেবে সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন কিন্তু দাদা স্বামী মারা যাবার সময় হুকুম জারি করে গিয়েছিলেন ক্লিওপেট্রাকে তারা 11 বছর বয়সে ছোট ভাই টলেমি ত্রয়োদশ কে বিয়ে করতে হবে যাতে তারা দুজনে মিলে সাম্রাজ্য শাসন করতে পারে।
ভাইয়ের সাথে ক্লিওপেট্রার বিয়ে ছিল কেবল মাত্র আনুষ্ঠানিকতা
অচিরেই চলে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সিংহাসনে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রতিহত করতে রোমান সেনাপতি এবং তার প্রেমিক জুলিয়াস সিজারের শরণাপন্ন হন। জুলিয়াস সিজারের সাথে রাজ্য শাসন করতে বললে তিনি আপত্তি জানায় জুলিয়াস সিজার এর সাথে জড়িয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত নীলনদের যুদ্ধে জুলিয়াস সিজারের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নীলনদের পানিতে ডুবে মারা যায়।টলেমির মৃত্যুর পর নিয়ম মেনে একজন সহ শাসক পাবার জন্য আরেক ছোটভাই টলেমী কে বিয়ে করেন ক্লিওপেট্টা। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। পরিবারে প্রতিবন্ধী আর কেউ না থাকলে নিজেকে মিশরের রানী বলে ঘোষণা করেন ক্লিওপেট্রা। মিশরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রানী ক্লিওপেট্রার শাসনামল। মিশরকে রোমানদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে রোমান শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করেন চতুর ক্লিওপেট্রা। একনায়ক জুলিয়াস সিজার ওমানি দুজনের সাথে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্লিওপেট্রা।

সেই প্রেমের পরিণতি নিয়ে অনেক ধরনের গল্প কথা প্রচলিত রয়েছে। ইতিহাস আর মানুষের কল্পনায়।
ক্লিওপেট্রার দুজন প্রেমিক ছিলেন রোমান সেনাপতি
দুজনেই ছিলেন বিবাহিত এবং দুজনেই প্রেমে পাগল ছেলের প্রেমে পাগল জুলিয়াস সিজার ভেনাসের মন্দিরের সদর দরজায় দুজনের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মার্ক আন্টিনিও পাগলামিতে আরো একধাপ উপরে একটা যুদ্ধের অভিযানে বাতিল করেছিলেন ক্লিওপেট্রার সময় কাটাবার অভিপ্রায়। অনেক বিষয়ের মত রসায়নশাস্ত্র খানিকটা পারদর্শী ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তিনি বিশ্বাস করতেন সুগন্ধি শুধু রূপচর্চায় উপাদান হিসেবেই নয় অন্যকে প্ররোচিত করার উপাদান হিসেবে খুব কাছের। কথিত আছে রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্থনির সাথে প্রথম দেখা করতে যাবার আগে তিনি তার জাহাজের পাল সুগন্ধি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন যাতে একজন তাকে চোখে দেখার পূর্বে আবৃত হয়ে পড়ে ক্লিওপেট্রার নিজের একটি সুগন্ধি ফ্যাক্টরি ছিল। যেখানে তিনি নিজেই তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি দিয়ে গোসল করতেন জানেন কি?কোন মানুষই বৃদ্ধ হতে চায়না সবাই চাই বয়স ধরে রাখতে কিন্তু বয়স ধরে রাখার ব্যাপারটা কিন্তু কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব তবুও নারীরা বয়স ধরে রাখতে চায়।শুধুমাত্র এই মহিলার গোসল এর জন্যই নাকি দরকার হতো ৭০০ গাধার দুধ।

সবচেয়ে বেশি মিশরের উন্নতি ঘটিয়েছিলেন ক্লিওপেট্রাই। এজন্য প্রজাদের কাছে প্রিয় ছিলেন তিনি। তবে বর্তমান বিশ্বেও আলোচিত এই রানির শেষটা ছিল খুবই করুণ। মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানান বিতর্ক। সেই সঙ্গে সমাধিরও খোঁজ মেলেনি আজো। কেউ বলেন সাপের কামড়ে, কেউ বলেন বিষ পানে আত্মহত্যা করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। তার সমাধি অই একই ভূমিকম্প আর সুনামিতে হারিয়ে গেছে সাগরতলে
রানী ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে আমাদের ইউটুব ভিডিও দেখুন
লেখকঃ আরিয়ান বাদশাহ

Hi, I am Ariyan, I am a Youtube content creator also a content writer in Jibhai.