মামার বিয়ের বরযাত্রী বই রিভিউ
মামার বিয়ের বরযাত্রী খান মোহাম্মদ ফারাবী মামার বিয়ের বরযাত্রী একটি শিশুসাহিত্যিক। খান মোহাম্মদ ফারাবী ছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক। তার লেখা”মামার বিয়ের বরযাত্রী” বইটিই ছিলো ছোটদের জন্য লেখা শেষ বই।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন সময়েই অকাল মৃত্যু ঘটে এই লেখকের।
“মামার বিয়ের বরযাত্রী ” বইটি ছোটদের জন্য লেখা হলেও উঠতি বয়সের পাঠক পড়েও ব্যাপক আনন্দ লাভ করবে৷ ফিরে যাবে তার শৈশবের দিনগুলোতে। বইটি আলাদা আলাদা বিভিন্ন গল্পের আদলে গড়ে উঠেছে। লেখক কামাল ভাই এর সাথে এক সুন্দর রসাত্মক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। কামাল ভাই যিনি খুবই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। প্রতিনিয়ত লেখক এবং লেখকের বন্ধুকে জব্দ করে যাচ্ছে। কিছুতেই কামাল ভাইয়ের কাছে পেরে উঠতে পারছে না। কামাল ভাই সবসময় বুদ্ধিতে বাজিমাত করছে। কামাল ভাই কে নিয়ে ক্রমাগতই কৌতুহল বেড়েই চলেছে লেখক ও তার বন্ধুদের মধ্যে। বইটির সূচিপত্রে রয়েছে লিডার বটে, কেমন জব্দ, কামাল ভাইয়ের প্লুটো যাত্রা, কামাল ভাইয়ের স্বদেশপ্রেম, মঙ্গলগ্রহের মানুষ, কামাল ভাইয়ের নাটক পরিচালনা, গুপ্তধন, তিতুমিরের প্রপৌত্র, নতুন মাস্টার, বাঘ বাঘ, ছাত্রাণাং অধ্যয়নং তপঃ, সর্বশেষে মামার বিয়ের বরযাত্রী।
সূচিপত্রের প্রত্যেকটি গল্পই পাঠক সমাজকে ব্যাপক আনন্দ প্রদান করবে। মনে পরে যাবে স্কুল জীবনের ছাত্র শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক। পরীক্ষার আগের রাতের শিহরণ, চুরি করে পাশের বাড়ির ফল পারা আর ধরা পরা, মায়ের কাছে বকা খাওয়া, ভাইয়ের হাতে পিটুনি, গৃহশিক্ষক কে কৌশলে তাড়ানো। প্রায় সবই আমাদের বার বার শৈশব কে মনে করিয়ে দিবে। কিছু মুহূর্তের জন্য হারিয়ে যাবে পাঠক তার কৌশরে। ‘মামার বিয়ের বরযাত্রী’র গল্পগুলো ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে লেখা। প্রত্যেকটি গল্পই একটি অন্যটির থেকে ভিন্ন। প্রথম কয়েকটি গল্প যেমন লিডার বটে, কেমন জব্দ, কামাল ভাইয়ের প্লুটো যাত্রা, কামাল ভাইয়ের স্বদেশপ্রেম, মঙ্গলগ্রহের মানুষ, কামাল ভাইয়ের নাটক পরিচালনা, গুপ্তধন, গল্পগুলো কামাল ভাইকে নিয়ে গড়ে উঠা কাহিনি। কামাল ভাইয়ের ফাঁকিবাজি চরিত্র ফুটে উঠেছে গল্পগুলোতে। টাকা মেরে দেওয়া ছিলো তার মধ্যে অন্যতম।লেখক ও তার বন্ধুরা বার বার বোকা হয়ে যেতো কামাল ভাইয়ের কাছে। কামাল ভাইয়ের আজগুবি বানানো গল্প প্রথমে তারা বিশ্বাস করলেও আস্তে আস্তে কামাল ভাইয়ের প্রতারণাপূর্ণ আচরণ প্রকাশিত হয়ে গেলে পরে আর লেখক আর তার বন্ধুরা বিশ্বাস করে না। আস্তে আস্তে কামাল ভাইয়ের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করে লেখক ও তার বন্ধুরা। তবু ও কামাল ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় না তারা। কামাল ভাই ছলে বলে কৌশলে তাদের কে ধরাশায়ী করেই ফেলে।
তিতুমিরের প্রপৌত্র এ লেখক আবারো এক ধূর্ত ভণ্ডামির লোকের সাথে পরিচিত হয় যিনি নিজেকে তিতুমিরের প্রপৌত্র হিসেবে সবার সাথে পরিচয় দেয়। এভাবে মিথ্যা পরিচয়ে লোকদের ঠকাতেও দ্বিধাবোধ করে না। লেখক ও এর শিকার। ‘নতুন মাস্টার ‘এ আমরা দেখি স্কুলে এক নতুন স্যার আসে, যেখানে লেখক অনেক দুষ্টামি করলেও ঐ শিক্ষকের বন্ধুসুলভ আচরণ লেখকে বার বার মুগ্ধ করে। ‘বাঘ বাঘ’ গল্পে আমরা দেখি শহরে একটা বাঘ ছুটে যায়। আর এ নিয়ে সারা এলাকায় ভয় ছড়িয়ে পরে। পরে এক ঘরের মধ্যে কুকুরকে বাঘ মরে করে এক হাস্যরসাত্নক কাহিনির আবির্ভাব ঘটে। তার পরের গল্পে ‘ছাত্রাণাং অধ্যয়নং তপঃ ‘ গল্পে দেখি কিভাবে গৃহ শিক্ষক কে ছলে বলে কৌশলে তাড়িয়ে দেয় দুই ভাই। সর্বশেষে ‘মামার বিয়ের বরযাত্রী ‘ গল্পে লেখক তার মামার বিয়ের বদলে অন্য কারোর বিয়েতে উপস্থিত হয়ে পরে, এসব কিছু নিয়ে যে হাসির রোল পরে তা জানতে আপনাকে অবশ্যই খান মোহাম্মদ ফারাবীর’ মামার বিয়ের বরযাত্রী’ বই টি পড়তে হবে।
বইটির মূল্য মাত্র – ৯৫ টাকা
সাদিয়া আফরিন
শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো বই রিভিউ পড়ুন বাংলা বই রিভিউ সমূহ

পাঠক,লেখক,বিতার্কিক,মুক্তমনা জ্ঞানপিপাসু।