মাইগ্রেন
মাইগ্রেন কি?
মাইগ্রেন
মাইগ্রেন হলো এক ধরনের মাথাব্যথা যা প্রথমে মাথার কোন একটা অংশ হতে শুরু হয়ে পরবর্তীতে সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।বিশেষ করে কপাল থেকে প্রথমে শুরু হয় অথবা ঘাড়ের পেছন অংশ হতে ধীরে ধীরে মাথার পেছন ভাগে বেশি ব্যাথা শুরু হতে পারে।আবার অনেকের ডান-বাম কানের গোড়া থেকেও শুরু হতে পারে। সাধারণ মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথার মধ্যে অনেক তফাৎ।এই সমস্যা প্রায় ৪-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ১১% ব্যাক্তি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে।তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মাইগ্রেনের সমস্যাটা বেশি হয়।মাইগ্রেনের ব্যাথা খুব পীড়াদায়ক।কারো একবার দেখা দিলে বার বার হতে থাকে।তবে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়ে থাকে।বিশেষ করে ২০-৩০ বছর বয়সের মানুষের মাইগ্রেনের সমস্যাটা দেখা যায়।
মাইগ্রেনের লক্ষণ সমূহ
প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের সমস্যার আলাদা আলাদা লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।তবে কিছু লক্ষণে মিল পাওয়া যায়।আবার অনেকের মাইগ্রেনের ব্যাথা এটা বুঝতে বুঝতেই অনেকটা সময় লেগে যায়।কারণ কোনটা সাধারণ মাথা ব্যাথা আর কোনটা মাইগ্রেনের মাথা ব্যাথা এটা বুঝে ওঠা একটু টাফ।
- মাথা বা ঘাড়ের যেকোন এক অংশ হতে ব্যাথা শুরু হয়ে তা ধীরে ধীরে সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
- বমি বমি ভাব হয়।
- উচ্চ শব্দ বা শোরগোল শোনলে অস্থির অস্থির লাগে।মেজাঝ খিটখিটে হয়ে যায়।
- চাইলেও জোরে কথা বলতে পারেনা।
- উজ্জ্বল আলো দেখলে ভীষণ খারাপ অনুভূত হয়।চোখমেলে তাকাতে কষ্ট হয়।
- শরীর দূর্বল লাগে।মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।প্রেসার কমে বা বেড়ে যেতে পারে।
- কোন কিছু খেতে ভালো লাগেনা,রুচি কমে যায়।
- অনেকের মাথাব্যথা এতটাই চরম লেভেলে পৌছে যায় যে নিজের মাথার চুল টানতে বা ছিড়তে থাকে।কারো এমন ইচ্ছে হয় যে মাথাটা ভেঙ্গে ফেলি। ব্যাক্তিভেদে আরো বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মাইগ্রেন কেন হয়?
মাইগ্রেন কেন হয় এর সঠিক ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি তবে কিছু কিছু সাধারণ কারণে মাইগ্রেন হয়ে থাকে।যেমন;
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে অথবা অতিরিক্ত গরম লাগলে।
- বাল্ব জ্বালিয়ে ঘুমালেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত নেশা পান করলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়।
- জেনেটিক্যালিও এ সমস্যা হতে পারে।একবার কারো হলে তার পরবর্তী প্রজন্মে এর স্থায়িত্ব দেখা যায়।
- খাবারের অনিয়ম হলে কিংবা বেশিক্ষণ ক্ষুধার্ত থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়।
- মেয়েদের মাসিক অথবা ঋতুস্রাবের কারণে মাইগ্রেনের সমস্যাটা বেশি হয়।
- ছেলেদের ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হলে এ সমস্যা দেখা দেয়,অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সহবাস করলেও এ সমস্যা দেখা দেয়।
- ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন-ডি এর অভাব থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়।
- অতিরিক্ত খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি কিংবা রাগান্বিত হয়ে বেশি চিলাচিল্লি করলেও মাইগ্রেনের সমস্যা অর্থাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়।
- গর্ভনিরোধক অষুধে এই সমস্যাটা একটু বেশিই হয়ে থাকে।
মাইগ্রেনের প্রতিকার
সঠিক কোন চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি।এটা হুট করে হয় আবার হুট করে চলে যায়।লহুব বেশি যে ইফেক্ট পড়ে তা না,তবে ধৈর্য ধরে থাকতে পারলে এমনি এমনিতেই চলে যায়।তারপরেও যদি বেশি সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।কিছু নিয়ম মেনে চললে এর থেকে মুটামুটি পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে;
- ঢেঁকি চাটা চাল এর ভাত বা রুটি খেতে হবে।
- বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে,বিশেষ করে বমি ভাব হলে পানি খেতে হবে ঘন ঘন।
- রঙ্গিম ফলমুলঃ- হলুদ,সবুজ ও কমলা রঙ্গের ফল নিয়মিত খেলে এ সমস্যা থেকে কিছুটা পরিত্রান পাওয়া যায়।
- ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এবং ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- নিজেকে একটা নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে।অতিরিক্ত সবকিছু বর্জন করতে হবে।যেমন অতিরিক্ত চিল্লাচিল্লি,অতিরিক্ত কথা বলা,অতিরিক্ত রোদ বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় থাকা এগুলো বাদ দিতে হবে।
- যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই এসি রুম বর্জন করতে হবে।
- শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে।অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগানো যাবে না।
- সকাল সকাল ঘুমোতে হবে এবং সকাল সকাল উঠে পড়তে হবে।যেকোন সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে এই নিয়মটির কোন জুড়ি নেই।এই নিয়ে একটা বিখ্যাত উক্তি আছে;Early to bad and early to rise,makes a man Healthy wealthy and wise.
- চকলেট,আইস্ক্রিম,কোল্ডড্রিংক্স,অর্থাৎ ঠান্ডা জাতীয় সকল খাবার পরিহার করতে হবে।
- অর্ধদিনের আগেই গোসল করে পেট ভরে গরম খাবার খেতে হবে।আর এটা শুধু মাইগ্রেম নয় আপনার জীবনের সকল স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থেকে উদ্ধার করবে।এগুলো মেনে চলার পরেও যদি সমস্যা হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।
মিলন শেখ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আরো পড়ুন
ডায়েট আলোচনা: কিটো, লো-কার্ব, ওয়াটার ফাস্টিং, এগ ডায়েট
খুসখুসে কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
মাথা ব্যথা সমাধান; ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করেই দেখুন

আমি মুক্তমনা, যদিও আমি গান গাইতে এবং কবিতা লিখতে বেশি পছন্দ করি। তবুও আমি এই ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে কন্ট্রিবিউট করে থাকি কারণ এই ব্লগ আমার খবু পছন্দের একটি অনলাইন প্লার্টফর্ম।