মহামায়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
‘ মহামায়া ’ গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অপূর্ব সৃষ্টি। একটি ব্যাতিক্রমী সৃষ্টিও বটে। কবি গুরু এই গল্পটি ভূতপূর্ব সমাজের পেক্ষাপটে লেখা, যখন সহমরণ অর্থাৎ সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। সতীদাহ প্রথা তৎকালীন হিন্দু সমাজের সর্বোচ্চ ভয়ংকর একটি প্রথা ছিল। যেখানে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীদেরও জীবন্ত দাহ করা হতো। ব্রাক্ষ্মন সমাজে এই সহমরণ প্রথার প্রচলন ছিলো সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ সময় তারা পাত্রের অভাবে এবং অত্যাধিক যৌতুক না দেওয়ার জন্য অশীতিপর বৃদ্ধের সাথে বিয়ে দিতো।যাকে মৃত্যুর পূর্বে শ্মশানে নিয়ে হরিনাম করা হচ্ছে মৃত্যুর অপেক্ষায়। যেমনটা আমরা কবি গুরুর ‘ মহামায়া ‘গল্পে দেখতে পাই। যেটি তৎকালিন হিন্দু সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল।
‘ মহামায়া ‘ গল্পের নায়ক ‘ রাজীব ‘এবং নায়িকা ‘ মহামায়া ‘। মহামায়া এবং রাজীব বাল্যবন্ধু। দুজনে দুজনের সাথে বাল্যকাল হতে পরিচিত। একসময় রাজীব বড় হয়ে মহামায়াকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু মহামায়া ছিল কুলীন ব্রাক্ষ্মণ সমাজের মেয়ে কিন্তু রাজীব কুলীন ব্রাক্ষ্মণ নয়। রাজীবের পিতা এক সাহেবের অধীনে রেশমের কুঠিতে চাকুরি করতেন। সেহেতু অপরূপ মায়াবতী মহামায়ার সাথে তার কখনও বাগদান সম্ভব নয়। কিন্তু দুজনেরই বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে মহামায়ার বাগদান হচ্ছিল না। ফলে কুলীন ব্রাক্ষ্মণ পাত্রের সাথে মহামায়ার বিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আর রাজীবের সাথে বিয়ে দেওয়া অসম্ভব। রাজীব একদিন মহামায়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, মহামায়া প্রথমে না বললেও পরে সে বিয়ে করতে রাজি হয়।
কিন্তু ভবানীচরণ সেই রাতেই মহামায়ার বিয়ে এক কুলীন বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণের সাথে দিয়ে দেন কিন্তু পরের দিনই সেই বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণ মারা যায় এবং অপরূপ রূপবতী মহামায়া বিধবাতে পরিণত হয়। পুরাতন হিন্দু ধর্মের নিকৃষ্ট প্রথা সতীদাহ প্রথা অনুসারে মৃত স্বামীর সাথে সহমরণে অর্থাৎ দাহ করার ব্যাবস্থা করা হলো। মহামায়ার হাত পা বেধে তাকে জীবন্ত দাহ করার জন্য চিতায় উঠিয়ে আগুন দেওয়া হলো এবং ধু ধু করে জ্বলে উঠল সেই আগুন। গঙ্গাঁর তীরে তখনই হঠাৎ করে প্রলংকার ঝড় এবং মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হল। তখন মহামায়ার হাত পায়ের বাঁধন খুলে গেল এবং মহামায়া মুক্ত হল। কিন্তু তখন আর মহামায়ার সেই রূপ নেই।তার মুখমন্ডল চিতার আগুনে পুড়ে বিভৎস আকার ধারণ করেছে। সে সেই রাতেই তার কথা রাখার জন্য রাজীবের কাছে চলে যায় এবং তাকে শর্ত দেয় সে তার ঘোমটা কোনদিনও খুলতে পারবে না। রাজীব শর্তে রাজি হয় এবং মহামায়াকে নিয়ে সোমপুর কুঠিতে চলে যায়। কিন্তু একদিন পূর্ণিমা রাতে রাজীব বাইরে এসে সুন্দর চাঁদ দেখতেছিল এবং মহামায়াকে দেখার ইচ্ছা হয় রাজীবের। রাজীব মহামায়ার ঘরে ঢুকলো তখন হালকা বাতাসে মহামায়ার ঘোমটা সরে যায় এবং চাঁদের আলোয় রাজীব দেখতে পায় মহামায়াকে। মহামায়ার সেই মুখমন্ডলকে। সেই চিতার আগুনে মহামায়ার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গিছে। মহায়ামার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং শর্ত ভাঙ্গার জন্য সে সারাজীবনের জন্য চলে যায়। তাকে আর কোন দিনও কোথাও পাওয়া যায় না। রাজীবের গৃহে সে আর আসে না।
সতীদাহ প্রথার পটভূমিতেই ‘ মহামায়া ‘ রচিত। একজন বিধবা নারীর অকালে জীবন্ত চিতায় শেষ হয়ে যাওয়া। তৎকালীন হিন্দু সমাজের সর্বোচ্চ কুসংষ্কার এবং হীনমাণ্যতার পরিচয় বহন করে এই জীবন্ত দাহ করা। বিধবা মেয়েটির হাত-পা বেধে রাখে যেন সে পালাতে না পারে। তখনকার সমাজে জাত্যভিমান ছিল সব থেকে বেশি। ফলে তারা জীবন্ত দাহ করতে কুন্ঠিতবোধ করত না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময়ের এই চিত্রটি তুলে ধরেছেন। কত বিধবা আত্মহতি দিত সেই সময়ে শুধু বিধবা হয়ে যাওয়ার কারনে।কত সম্পর্কের বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে যেত শুধুমাত্র জাত্যভিমানের কারনে। যেমন দেখতে পাই মহামায়া ও রাজীবের মাঝখানে। ভবাণীচরনের ভয়ংকর কৌলিন্য গর্বের কারণে মহামায়া এবং রাজীব দুজনের জীবনই ধবংস হয়ে গেল।
সুতরাং বলা যায় যে, সতীদাহ প্রথা আমাদের তৎকালীন হিন্দু সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। তারা তাদের নিজেদের মেয়ে বা বোনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেও কুন্ঠিত বোধ করতেন না। যেমনটি আমরা দেখতে পাই,রবীন্দনাথ ঠাকুরের ‘ মহামায়া ‘ নামক ছোটগল্পে।

As a student of english department it’s my duty to analysis the Poem, Novel, Play and others part of literature and spread it to others so that it can help them to understand it more efficiently. That’s why I analysis those things and share it with others through this site.