বঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব বই রিভিউ। লেখক তানভীর সালেহীন ইমন

বঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব

তানভীর সালেহীন ইমন

বইবঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব
লেখকতানভীর সালেহীন ইমন
প্রকাশক তাম্রলিপি, বাংলাবাজার, ঢাকা
মূল্য ২১০ টাকা
পৃষ্ঠা ১১০
বঙ্গবন্ধু ও বহির্বিশ্ব বই ইনফো টেবল

সূচিপত্র

বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত

জন্ম -১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। 

পিতা- শেখ লুৎফর রহমান

মাতা-সায়েরা খাতুন

১৯৪২ সাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত। 

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভুমিকা পালন।

বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বৈদেশিক রাষ্ট্রের ভূমিকা

বঙ্গবন্ধু ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা,স্থপতি, বিনির্মাতা ও জাতির পিতা। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় শেখ মুজিব  সমবায়,কৃষি ও বন বিভাগের মন্ত্রী হন।২৫ মার্চের গণহত্যার ঘটনা আমরা সবাই জানি।যুদ্ধে ভারত প্রথম থেকে বাংলাদেশের সহযোগী ছিল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত ছিল,তবে শর্ত ছিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘমেয়াদে ইজারা দিতে হবে।মুজিব প্রস্তাব টি শুধু প্রত্যাখানই করেন নি,উন্নত শিরে জোসেফ ফারল্যান্ডকে বলেছিলেন,”আপনাকে আমি চিনি,আপনি ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানের হোতা ছিলেন,মনে রাখবেন আমি আমার দেশকে পাকিস্তানি শেয়ালের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকার বাঘের  হাতে তুলে দিতে পারি না”

২৫ মার্চের গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেন ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেন।

বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি

– ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ দুপুর ১.৪১ মিনিটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছে জ্যোতির্ময়’ এর মতো ইতিহাসের কিংবদন্তি মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে পদার্পণ করেন।বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে তিনি বলেন,’এই তো তোমরা আমাকে পাইয়াছ,আমি আবার আসিয়াছি।এই তো আমার বাংলাদেশ, আবার নয়ন মেলিয়া দেখিয়াছি-বাঙালিদের দমন করার ক্ষমতা কোন শক্তির নাই।আমার স্বপ্ন আজ সফল, বাংলাদেশ স্বাধীন হইয়াছে।বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে খাদ্য পাইতে হবে,পাইতে হবে বস্ত্র,আশ্রয়,জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এভাবে শুরু হয় জাতির জনকের দেশ গড়ার নতুন সংগ্রাম

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বৈদেশিক ভূমিকা

ভুট্টোর ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।২১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের দিনই সন্ধ্যায় বিদেশি কূটনৈতিক ও সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবকে শীঘ্রই কারা মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হবে।

১ জানুয়ারি, ১৯৭২ মার্কিন সাপ্তাহিক ‘টাইম পত্রিকা’ সূত্রে প্রাপ্ত এক সংবাদে বলা হয়,আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের বন্দী নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়ার কথা প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বিবেচনা করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরন সিং এক বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন,সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের বিচার হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ত্বরাণ্বিত করেছে।তিনি বিশ্বের ২৪ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করেন এবং কয়েকটি দেশে তার প্রতিনিধি প্রেরন করেন।

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ছিল “সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়” ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ লাহোর বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,আমি বামপন্থী নই, দক্ষিণপন্থীও নই,আমি আমার দেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতিতে সাম্রাজ্যবাদ,উপনিবেশবাদ,ধর্মীয় মৌলবাদ,বর্ণবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান ছিল।আরো যে বিষয়গুলো প্রতীয়মান ছিল,

  • আত্নমর্যাদার পররাষ্ট্রনীতি
  • সবার সাথে বন্ধুত্ব ও মৈত্রী 
  • কোন রাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল না হওয়া
  • জোট-নিরপেক্ষ নীতি
  • বৈদেশিক সাহায্য আদায়ের কূটনীতি
  • প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন
  • পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেন। ১৯৭২ সাল শেষ না হতেই  ৫০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

বঙ্গবন্ধু ও ভারত

বঙ্গবন্ধুর সাথে ভারতের সম্পর্ক ছিল খুবই ভালো। তিনি অনেকবার ভারত ভ্রমণ করেন। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন,”শেখ সাহেব তাঁর জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের স্বাধীনতা এনে দিবেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু ও মুসলিম বিশ্ব

যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালায় যে,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের  ভাবমূর্তি অনেকটা ইতিবাচক মনোভাবে পরিণত হয়।১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় আরবদের প্রতি শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে পাঠানো হয়েছিল ২৮ সদস্যের একটি মেডিকেল ইউনিট।মিশরীয় সেনাবাহিনীর জন্য পাঠানো হয়েছিল ১ লাখ পাউন্ড চা।

বঙ্গবন্ধু ও এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ

বঙ্গবন্ধু এশিয়ার সবগুলো দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দেন। পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দেন কারণ পাকিস্তানের কাছে পাওনা ছিল বাংলাদেশের। বাঙালি ফেরত, সম্পদ বিভাজন ইত্যাদি ইস্যুতে বাংলাদের স্বার্থ ছিল। বঙ্গবন্ধু এক সভায় বলেন, এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।আমরা কারো সঙ্গে কোন বিবাদে লিপ্ত হতে চাই না।

বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথেও সদ্ভাব বজায় রাখেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তির প্রতীক। নিউজ উইক সাময়িকীর রিপোর্টার রবার্ট বঙ্গবন্ধুকে ‘poet of politics ‘বা ‘রাজনীতির কবি’ বলে অভিহিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্ত করে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৭৩  সালের মে মাসে বিশ্ব শান্তি পদক ‘জুলি ও কুরি’ অর্জন করেন।

বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবন আরো গভীরভাবে জানতে পড়ে ফেলুন তানভীর সালেহীন ইমন এর “বঙ্গবন্ধু ও বহিবির্শ্ব” বইটি।

আরো পড়ুন

আমার মুক্তি সংগ্রাম বই রিভিউ

Leave a Comment