এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া বইটির প্রথম অংশের রিভিউ
এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া” মূল আকর্ষন ই.এম. ফরস্টারের জন্ম হয় ১৮৭৯ সালে লন্ডন শহরে। তিনি পাঠ্যজীবন শুরু করেন টনব্রিজ স্কুলে এবং পরে কেমব্রিজের কিংস কলেজে। বইটিতে উল্লেখ্য ,কিংস কলেজের সাথে ফরস্টারের সম্পর্ক কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি।কেমব্রিজে পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।কেমব্রিজ ই তাঁকে প্রথম শেখায় যে তিনি সমাজবহির্ভূত নন।
এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া বইটির মূল সারাংশ
ফরস্টার ব্রিটিশ ভারতে এসেছিলেন দুবার।প্রথমবার ১৯১২-১৩ সালে এবং দ্বিতীয়বার ১৯২১ সালে হিন্দু রাজ্য দেওয়ানের মহারাজার দেওয়ানরুপে।এ দুবারের ভারত ভ্রমণ থেকে ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসের পটভূমি তাঁর মনোজগতে তৈরি হয়ে গিয়েছিল।তাঁর এই ভারতবোধ কতটুকু কাল্পনিক, কতটুকু প্রকৃত তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর মানসিকতা যথার্থ বোঝার জন্য একটু আগের কথা জানা দরকার। বইটিতে ব্রিটিশ শাসকদের মনোদর্পনে ভারতবর্ষ অনেকরুপে প্রতিফলিত হয়েছে।দীর্ঘদিন ধরেনানা পথ বেয়ে ভারতবর্ষ এসে পৌঁছেছে তাদের মনের দোরগড়ায়।তাদের প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল যে ভারতবর্ষ নামক দেশটা বর্বর কালো মানুষের দেশ।এরা অনাচারী এবং পৌত্তলিক। পরবর্তী যুগে দিল্লী আগ্রার বিলাসবহুল নবাবিয়ানা তাদের চোখে মধ্যযুগীয় বিলাসিতার ক্ষয়িষ্ণুরুপ বলে মনে হয়েছিল।তখন বহিরাগতদের চোখে আঙুল দিয়ে যা দেখানো হতো তা শুধু তাজমহল’ যেন তাজমহল ছাড়া ভারতবর্ষের দেখাবার কিছু নেই এবং তাও নাকি এক ইতালীর স্থপতির তৈরি।ভারতবর্ষের এই দরিদ্র নিঃস্ব রুপ দেখে রাজপুরুষদের দৃষ্টি অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিল।এই অভ্যস্থ দৃষ্টি প্রথম চমক খেল বিংশ শতাব্দীর শুরুতে।সহসা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল যেন।
শিল্পে, সঙ্গীতে, কাব্যে, ধর্মবোধে এক বর্ণময় রঙিন ভারতবর্ষের ছবি ভেসে উঠল শাসকদের মনের আয়নায়।বস্তুত পাশ্চাত্যবাসী চিন্তানায়কদের প্রেরণাতেই ভারতবর্ষ যেন বিশ্বের কাছে নবাবিষ্কৃত হয়েছিল তখন।একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং অানন্দকুমার স্বামী। শিল্প ও সাহিত্যজগতের এই দুজন বরেণ্য ভারতীয়কে ইতিমধ্যেই বরণ করে নিয়েছিল পাশ্চাত্যদেশগুলি।তাদের দেওয়া জয়মালা গলায় পরে এঁরা সেদিন যা বলেছিলেন তা শুনতে অনাগ্রহী হয়নি ইংরেজ রাজপুরুষ তথা ইউরোপ।ভারতবর্ষের ধর্মচেতনা, তার শিল্প -সঙ্গীত এবং কাব্যবোধ এক নতুন মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হল ইংরেজদের চোখের সামনে।ফরস্টার যখন ভারতবর্ষে এলেন তখন এই মাত্রার জন্ম হয়েছে।
এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া”প্রথম মহাযুদ্ধ এবং তার বিভীষিকা মানুষের সঙ্গে মানুষের সাবেকি সম্পর্কে অত্যন্ত নির্মমভাবে উপহাস করেছিল।
ফরস্টার কে আকর্ষণ করেছিল প্রাচ্যের অধ্যাত্মবাদ।উপন্যাসের এক মুখ্য চরিত্র ফীলডিং।ফীলডিং ইশ্বর বিশ্বাসী নয় কিন্তু অবিশ্বাসী নাস্তিক ও সে নয়।কাঁধের লুকানো ডানা মেলে দিয়ে মানুষ যখন হঠাৎ পথ সম্বল করে বেড়িয়ে পড়ে, তখন ফীলডিং অভিভূত হয়ে যায়।তার মনে হয় এমন ভারমুক্ত জীবনযাপন করতে পারে শুধু ভারতবর্ষের মানুষই।যুগে যুগে এদেশে পাঠান মোগল ইংরেজ ক্রিশ্চান এসেছে।কিন্তু সবাই মিলে গেছে ভারতবর্ষের আত্নার মধ্যে। তথাপি মিল হল না।পূর্ব ও পশ্চিমের দুস্তর ব্যবধান প্রাচীর আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে।ফীলডিং এর বাড়ানো হাত ধরল না আজিজ।মিলন চাইল না পৃথিবী।সবাই না করল বলল মিলন হবে না ইস্ট এবং ওয়েস্ট। তাদের মনে হল এখনো সময় হয়নি।জটিল এবং দুর্বোধ্য এই অনুসন্ধানই বোধহয় ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া ‘ উপন্যাসের মূল আশ্রয়। মূলত ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু অখণ্ড সত্তা নিয়ে নয়।দেশ খন্ডিত হয়েছে, জীবনে জীবন মেলেনি।
কোথায় কোথায় পড়ানো হয়
এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া” উপন্যাসটি অনার্স এবং মাস্টার্স লেভেলে পঠিত হয়।ইতিহাস জানতে আগ্রহী পাঠক উপন্যাসটি পাঠ করতে পারবে এবং এতে পুরো ভারতবর্ষের চিত্র অঙ্কিত করতে সমর্থিত হবে
পাঠকসমাজ।
মূল্য ঃ ১২৫ টাকা।
অনুবাদ -রবিশেখর সেনগুপ্ত।
প্রকাশক
ফ্রেন্ডস বুক কর্নার
১৭ রাফিন প্লাজা, মিরপুর রোড
ঢাকা ১২০৫।
সাদিয়া আফরিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো বই রিভিউ পড়েন
“জোছনা ও জননীর গল্প ” বইটির রিভিউ
রবিন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি
আমার দেখা নয়াচীন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

অনলাইনে লিখতে ভাললাগা থেকেই এই ব্লগে নিয়মিত লিখে যাচ্ছি। এভাবে নিয়মিত কন্ট্রিবিউট করে যেতে চাই।
nice review
Informative review