পড়া মনে রাখার উপায়
পড়া মনে না থাকার ব্যাপারটা সবার মধ্যেই কম বেশি আছে। আমার নিজের মাঝেও এই সমস্যা ছিল একসময়। সারারাত জেগে পড়েছেন। কিন্তু সকালে পরীক্ষার হলে বা ক্লাসে গিয়ে দেখেন সেটা ভুলে গিয়েছেন। এমন ঘটনা সবার সাথেই ঘটে।
অনেকেই এই সমস্যার জন্য হতাশার ভুগেন। কেউ কেউ নিজের ব্রেনকে দোষ দেন বা নিজেকে দোষ দেন। তবে এই ব্যাপারটি নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই, এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। চলুন জেনে নিই পড়া মনে রাখার সহজ উপায় বা গোপন কৌশলগুলো
পরিমিত মাত্রায় ঘুম

যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জেসিকা পেইন এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মী মিলে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে বলা হয়, পড়াশোনা শেষ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমালে তা পড়া মনে রাখায় বেশ সহায়তা করে। তাছাড়া পরিমিত মাত্রায় ঘুমালে, মন এবং শরীর দুটোই ফ্রেশ থাকে। তাই পড়াশোনার পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে হবে। সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে ৮ ঘন্টার মত ঘুমানো উচিত। এর থেকে কম ঘুমালে পড়া মনে রাখার সক্ষমতা হ্রাস পায়।
সুস্থ এবং শান্ত মন নিয়ে পড়তে বসা

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন, যারা অসুস্থ অবস্থায় পড়তে বসেন। এতে পড়ার বদলে সময় নষ্ট হয়। পড়া মাথায় থাকে না। পড়া মনে রাখার উপায়, পড়তে বসার আগে অবশ্যই মনকে শান্ত এবং সুস্থ করতে হবে।
পড়তে বসার আগে হাটাহাটি করা

পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বেড়ে যায়। পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল হল পড়তে বসার আগে ব্যায়াম অথবা হাটাহাটি করতে হবে।
পড়াকে আকর্ষণীয় ভাবা

কোন বিষয় পড়ার আগে, সেই বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরী করতে হবে। আমরা সাধারণ জিনিসের চেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস বেশি মনে রাখতে পারি। তাই আকর্ষণ অনুভব করে পড়তে হবে।
জেনে-বুঝে পড়া

কোন বিষয় পড়ার ক্ষেত্রে, সেটাকে বুঝে বুঝে পড়তে হবে। মনযোগ পুরোটা পড়ার দিকে দিতে হবে। অনেকে পড়া না বুঝে গটবাধা মুখস্থ করে। যার কারণে মুখস্থ করলেও, সেটা বেশিক্ষণ মনে থাকে না। বুঝে বুঝে পড়লে সেটা অনেকদিন মনে থাকে।
রিভিশন করা

জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘসের মতে, যে কোনো কিছু পড়ার এক ঘণ্টা পর সেটির মাত্র ৪৪ শতাংশ আমাদের মনে থাকে। অনেকে একটানা পড়তেই থাকে। এভাবে একটানা না পড়ে, বিরতি দিতে হবে। বিরতি দিয়ে, আগের পড়া জিনিসগুলো রিভিশন দিতে হবে। বিরতি দিয়ে রিভিশন করে পড়লে যে কোনো পড়াই অনেকদিন মনে থাকে।
হাইলাইট বা মার্ক করে পড়া

পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল হল হাইলাইট বা মার্ক করে পড়া। অনেকেই বই দাগিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দাগিয়ে পড়তে হবে। দাগানো বা মার্ক করা শব্দগুলোর প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করে। তাই কয়েকবার পড়লেই এটা মনে থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের হাইলাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়া জিনিস অন্যকে বুঝানো

পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল হল পড়া জিনিস অন্যকে বুঝানো পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। যে কোনো বিষয় পড়ার পরে, তা অন্য কাউকে শেখানোর চেষ্টা করলে সেই পড়া অনেকদিন মনে থাকার সম্ভাবনা থাকে। অন্যের কাছে আলোচনা করলে, নিজের ভুলত্রুটি গুলোও সংশোধন করা যায়।
লিখে বা ছবি একে পড়া

পড়া মনে রাখার উপায় হল, কোন বিষয় পড়ার পাশাপাশি লিখলে, মাথায় তার প্রতিচ্ছবি থেকে যায়। একবার লিখলে, ৫-১০ বার পড়ার সমান কাজে দেয়। নিউরো সায়েন্সের মতে, কিছু লিখলে বা ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা উদ্দীপিত হয় এবং ছবি বা লেখাটিকে স্থায়ী মেমরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে।
খাতায় লিখা বা ছবি আকা বিষয়, পরীক্ষার সময় চোখের সামনে ভেসে উঠে। তাই লিখে বা ছবি এঁকে পড়লে, সহজে মনে থাকে।
পড়াকে ভাগ ভাগ করা

পড়া মনে রাখার উপায়, কোন বিষয় বা টপিকস পড়ার আগে অধ্যায়গুলোকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিলে পড়তে সুবিধা হয়। এতে আমাদের ব্রেন ও কিছুটা বিশ্রাম পায়।
সময় নির্বাচন

পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল হল সময় নির্বাচন। পড়ার আগে কোন সময় ভাগ করে নিতে হবে। পড়ার জন্য কত সময় সেটা আগেই টার্গেট নিতে হবে। অনেকে ভাবে সারাদিন-সারারাত পড়লেই পড়া বেশি মনে থাকে। এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। সবসময় আমাদের ব্রেইন একইভাবে কাজ করতে পারে না। বিকালের পর আমাদের ব্রেইনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই বিকালের পরে অর্থাৎ সন্ধ্যায় বা রাতে পড়া বেশি কার্যকর হয়।
গুছিয়ে পড়া

পড়া মনে রাখার উপায়, এলোমেলো ভাবে পড়লে, সেই পড়া আমাদের ব্রেন বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। তাই পড়াকে সাজিয়েগুছিয়ে এবং বিষয়গুলো একের পর এক পড়তে হবে।
পড়া জিনিসকে বাস্তবে মিল খোঁজা বা কল্পনা করা

আমরা আমাদের চারপাশে চলমান ঘটনা সহজেই মনে রাখতে পারি। তাই কোন বিষয় পড়ার সময়, সেই বিষয়কে বাস্তবে মিল বা উদাহরণ হিসেবে ভাবতে হবে।
শব্দ করে পড়া

শব্দ করে বা জোরালো কণ্ঠে পড়লে, পড়ার পাশাপাশি শোনাও যায়। এতে আমাদের মনযোগ বাড়ে। জোরে পড়লে মাথায় তথ্য দ্রুত ঢুকে যায়। যেমন একটি গান উচ্চস্বরে শুনলে সহজেই মনে থাকে। তাই জোরে পড়তে হবে।
মনযোগ দিয়ে পড়া

পড়ার মাঝে অনেকেই ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক বা ইউটিউব স্ক্রল করে। অনেকে আবার বারবার পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। এতে মনযোগ নষ্ট হয় এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। তাই পড়তে বসার আগে সব কাজ সেরে নিতে হবে। পড়ার মাঝে ফোন হাতে নেওয়া যাবে না। একটানা মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
আরো পড়ুন

পাঠক, লেখক, ইতিবাচক চিন্তাবিদ, আশাবাদী, সংগঠক, দেশপ্রেমিক।