দ্য ম্যাজিক অব থিংকিং বিগ (The Magic Of Thinking Big) বই রিভিউ

দ্য ম্যাজিক অব থিংকিং বিগ (The Magic Of Thinking Big)

একটি অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় আত্ন গঠনমূলক বই হচ্ছে, ‘The Magic Of Thinking Big’ ১৯৫৯ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। ডেভিড জে. স্কোয়ার্টজ বইটি লিখেছেন। ১৯৮৭ সালে বইটি দ্বিতীয়বার বড় পরিসরে প্রকাশিত হয়েছিলো। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে স্বনির্ভরতা অর্জন করার জন্য এই বইটিকে অন্যতম সেরা প্রভাবশালী বই হিসেবে স্বিকৃতি দেয়া হয়েছিলো। 

২০১৫ সালের একটি জরিপ অনুসারে সারা বিশ্বে বইটি ৬ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিলো বলে জানা যায়। ১৯৮২ সালের শেষ দিকে, অন্য একটি জরিপে উঠে এসেছে, বইটি পেপারব্যাক বেস্ট সেলার তালিকায় প্রায় 1,494,000 কপি বিক্রি হয়েছে।

বিখ্যাত লেখক থমাস জে. স্ট্যানলি তার ওয়েবসাইটে বইয়ের লেখক অর্থাৎ স্কোয়ার্টজ এর প্রশংসা করে বলেন, লেখককে কিভাবে এমন মোটিভেশনাল বই লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলো যা তাকে মিলিয়নিয়ারের তালিকায় পৌছে দিয়েছিলো। 

এছাড়া বিখ্যাত আমেরিকান ফুটবল কোচ এবং ক্রিড়াবিদ লউ হোলট্জ এই বইটিকে তার জীবনের সেরা একটি বই হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। 

বইট আপনাকে শিক্ষা দেয়, সত্যিকারের সফলতা পাওয়ার গোপন রহস্য। কিভাবে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ জীবন ধারণ করতে হয়।

The Magic of Thinking Big বইটি আপনাকে জীবনের গতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিবে। এমনকি আপনার সাংসারিক জীবন এবং পারিবারিক জীবন সম্পর্কে পথনির্দেশ করে। সফলতা পেতে জীবনে খুবই মেধাবী হতে হবে বিষয় টা এরকম নয়, বরং সফলতার সাধনা আপনি কিভাবে করছেন সেটিই মুল বিষয়। বইটি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বড় চিন্তা করতে শিখুন এবং বড় চিন্তাধারা থেকে জীবনের অনুপ্রেরণা খুজে নিন, অধিক অর্থ উপার্জনে সক্ষম হোন, জীবনে সফলতায় ভরপুর হোন। 

নিজের মনে বিশ্বাস তৈরি করুন যে আপনি সফল হবেন

এখানে বর্ণিত হয়েছে বিশ্বাস অর্জন করা এবং এর শক্তি সম্পর্কে

সবসময় সফলতার কথা চিন্তা করুন, বিফলতার কথা চিন্তা করবেন না। কারণ বিফলতার কথা চিন্তা করলে আত্নবিশ্বাস কমে যায়। কাজ করার সময় কিংবা অবসরের সময়, বিফলতা চিন্তা করার পরিবর্তে সফলতার কথা চিন্তা করুন। এমনকি যখন কঠিন মুহুর্ত আপনার সামনে এসে হাজির হয়, তখনও চিন্তা করবেন, “আমি জিতবো”, “আমি হার মেনে নিবোনা”৷ যখন কোনো ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন, তখন চিন্তা করবেন, “আমি আমার প্রতিযোগীর চেয়ে কোনো অংশে কম না, বরং সমান”। 

যখন সুযোগ পাবেন ভালো কিছু করে দেখানোর, চিন্তা করবেন, ” আমি কাজটি করতে পারবো, আমার দ্বারা কাজটি করা সম্ভব। “আমি পারবোনা” – এই কথা চিন্তা করবেন না। নিজের মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন, চিন্তাশক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। সফলতার চূড়ান্ত মুহুর্ত চিন্তা করুন, যা আপনার কাজের গতি এনে দিবে। একইভাবে বিফলতার কথা চিন্তা করলে আপনি কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করতে পারবেন না। কারণ বিফলতার কথা চিন্তা করলে আপনি সেই দিকেই ধাবিত হবেন। 

আপনি সত্যিই যে উন্নতমানের যোগ্যতা রাখেন, সেটি নিয়মিত চিন্তা করুন। সফল মানুষেরা সুপারম্যানের মতো উড়তে জানেনা, কিংবা তারা কোনো লৌহ মানব নয়। সফলতা পেতে হলে স্পেশাল কোনো বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন নেই অথবা প্রয়োজন নেই কোন পৌরাণিক কাহিনির মতো অদৃশ্য শক্তির৷ সফল মানুষেরা ভাগ্যের উপর তাকিয়ে থাকেনা। তারা শুধু তাদের সফলতায় বিশ্বাস রাখে এবং জানে যে তারা কি করছে৷

বড় সফলতা পাওয়ার চিন্তা করুন। আপনার বিশ্বাসের আকারের উপর সফলতার মাত্রা নির্ভর করবে। সুতরাং ছোট চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষা আপনাকে ছোট প্রাপ্তির দিকেই ধাবিত করবে। ছোট স্বপ্ন নিয়ে কখনো বড় কিছু অর্জন করা যায়না। বড় ধরনের সফলতার কথা চিন্তা করুন এবং উচ্চ পর্যায়ের সফলতা অর্জন করুন। খেয়াল করে থাকবেন যে, বড় চিন্তা-ভাবনা অনেক সময় ছোট ছোট চিন্তাধারার চেয়েও সহজ।

অজুহাত দেওয়া থেকে নিজের মনকে দূরে রাখুন, যা ব্যার্থ হওয়ার ব্যাধি

মন যদি নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে থাকে তাহলে অনেক অজুহাত সামনে চলে আসে। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ কিছু অজুহাত হচ্ছে, স্বাস্থ্য অজুহাত, বুদ্ধিমত্তার অজুহাত অর্থাৎ আমি খুব বুদ্ধিমান নই তাই ব্যার্থ হবো, ভাগ্যের অজুহাত দেওয়া বা মনে করা, আমার ভাগ্য খুব খারাপ। সবসময় ভাগ্য আমাকে নিয়ে খেলা করে। বয়সের দোষ দেওয়া বা বয়স বেড়ে গেছে এমন অজুহাত দেওয়া। 

আমার স্বাস্থ্য খারাপ

স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিন। যতাও বেশি স্বাস্থ্য চিন্তা করবেন, যেমনঃ সাধারণ জ্বর, শর্দি, কাশি ইত্যাদি, এগুলো ততই আপনার মনকে ডিমোটিভেট করে দিবে। স্বাস্থ্য নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করার অপর নাম হচ্ছে ব্যার্থ চিন্তার বীজে সার প্রোয়োগ স্বরুপ। এছাড়া স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা একটি খারাপ অভ্যাস। লোকজনের মনে আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হবে। এটা অনেকে আত্নকেন্দ্রীক করে তোলে। রোগব্যাধির অজুহাত দিয়ে আপনি হয়তো ভাবছেন লোকে আপনাকে সহানুভূতি দেখাবে বা আপনাকে সম্মান করবে। কিন্তু পরিণামে এমনটা হয়না। আপনি নিজে তো পিছিয়ে যাচ্ছেন এবং লোকজনও আপনাকে মূল্যহীন মনে করবে৷ 

নিজের স্বাস্থ্য যে অবস্থায় আছে তা নিয়ে তৃপ্ত থাকুন। ইংরেজিতে একটি লোককথা প্রচলিত আছে, “I felt sorry for myself because I had ragged shoes until I met a man who had no feet” আপনি ভালো বোধ করছেন না, এমন অজুহাত না দিয়ে চিন্তা করুন, “আমার স্বাস্থ্য যেমন আছে, অনেকের চেয়ে ভালো আছে”। 

শুধু নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন। কল্পনা করুন আপনার অনেক ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা এবং প্রকৃত অসুখ মোকাবিলা করার জন্য। সবসময় মাথায় রাখবে, আপনার জীবন, আপনার উপভোগ্য৷ তাই এর মুল্য দিতে শিখুন। হাসাপাতাল বিছানায় নিজেকে কল্পনা করে দিন অতিবাহিত করবেন না। 

সফলতা অর্জন করার জন্য আপনার যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা রয়েছে

নিজের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে অপরকে শ্রেষ্ঠ ভাবা বন্ধ করে দিন৷ খুব দ্রুতই নিজেকে বিকিয়ে দেবেন না। নিজের লক্ষ্য অর্জনের উপর সজাগ ও সচেষ্ট থাকুন। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলুন। আপনার কতোটা বুদ্ধিমত্তা আছে সেটা বড় বিষয় নয়, বরং নিজের বুদ্ধিমত্তার সবটুকু কাজে লাগানোই হচ্ছে প্রধান বিষয়। ব্রেইনকে বিব্রতকর অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা না করে বরং কিভাবে তা উত্তরণ ঘটানো যায় সেই চেষ্টা করুন।

প্রতিদিন নিয়মিত নিজের মস্তিষ্ককে মনে করিয়ে দিন, “আমার বুদ্ধিমত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার মনোভাব বা কাজের স্পৃহা”। তাই সবসময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন। কোনো কাজে সফলতার জন্য রাস্তা গুলো খুজে বের করুন, কি করলে ব্যার্থ হবেন এই চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। আমি জিতবো- এমন মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। সৃষ্টিশীল ও মনোনশীল কাজে নিজের ইতিবাচক মনোভাব গুলোকে কাজে লাগান। ব্যার্থ হওয়ার কারণ নিয়ে চিন্তা না করে, জিতে যাওয়ার রাস্তা গুলো খুজতে থাকুন।

একটি কথা ভুলে যাবেন না, মুখস্ত শক্তির চেয়ে চিন্তাশক্তির ক্ষমতা অনেক ভালো ও কার্যকরি। আপনার মস্তিষ্ককে নতুন আইডিয়া বের করতে কাজে লাগান। কিভাবে আরও ভালো ও কার্যকরি পন্থা খুজে পাওয়া যায় সে বিষয়ে ভাবুন। একটি কথা কল্পনা করুন, ” মানুষের বানানো ইতিহাস আমি চর্চা করছি? নাকি নতুন ইতিহাস আমার মাধ্যমে রচনা হবে?”। 

বয়স কি সফলতার ক্ষেত্রে সত্যিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে

আপনার বর্তমান বয়সকে ইতিবাচক ভাবেই মেনে নিন। চিন্তা করুন, “আমি খুব বয়স্ক হইনি, আমি যতটা বয়স্ক চিন্তা করি ততটা বয়স্ক আমি আসলে নই”। নতুন দগন্ত উন্মোচনের জন্য আপনার মাঝে লুকিয়ে থাকা উদ্যমকে কাজে লাগান এবং নিজের যৌবনকে উপভোগ করুন। 

নিজের জন্য ঠিক কতোটুকু কার্যকরি সময় বেচে আছে সেই হিসেব করে ফেলুন। বলা হয়ে থাকে যে, ৩০ বছর বয়সের একজন ব্যাক্তির মাঝে এখনো ৮০% সৃজনশীল কাজের সম্ভাবনা থাকে এবং ৫০ বছর বয়সী ব্যাক্তির ৪০% সম্ভাবনা থাকে তার সেরা কাজ করার জন্য৷ আসলে সময়কে কাজে লাগালে সময় বেশি পাওয়া যায়, যা মানুষ চিন্তা করেনা। 

নিজের ভবিষ্যৎ কাজের জন্য সময়কে কাজে লাগান। আপনি যখন নেতিবাচক চিন্তা করবেন এবং মনে করবেন যে আপনার কাজের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে, তখনই আপনার কাজ দেরি হয়ে গিয়েছে ভেবে নিবেন। ” আমি কাজটি করার জন্য অনেক দেরি করে ফেলেছি এমন চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি একটি নেতিবাচক চিন্তা। বরং চিন্তা করুন, “এখনই আমার কাজ করার শ্রেষ্ঠ সময়, আমার সুন্দর সময়গুলো সামনে অপেক্ষা করছে”। সফল লোকেরা এভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করে। 

“আমার ভাগ্য খারাপ, মন্দ ভাগ্য আমার সঙ্গি”

কারণ ও ফলাফল মেনে নিতে শিখুন। যারা সফল বা আপনার চোখে সৌভাগ্যবান, তাদের সাথে কি ঘটেছে সে বিষয়ে লক্ষ্য করুন। আপনি দেখতে পাবেন যে, তাদের সফলতার পিছনে ছিলো, সাধনা, পরিকল্পনা, অধ্যবসায়, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা যা তাদেরকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছে। এবার মন্দভাগ্যের লোকেদের দিকে লক্ষ্য করুন। দেখতে পাবেন যে তাদের ব্যার্থতার পিছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ ছিলো।

নিজেকে কখনো প্রার্থনারত চিন্তাশীল বানাবেন না। সফলতা পাওয়ার জন্য শর্টকাট কোনো উপায় বা পরিশ্রমহীন কোনো পথ চিন্তা করে নিজের মস্তিষ্কে ঘুন ধরাবেন না। কারণ শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে আমরা সফল হতে চাইনা। কারণ সফলতা তখনই আসে যখন আপনি সেই কাজগুলো করবেন। জীবনে উন্নতি, বিজয় বা ভালো কিছুর প্রত্যাশা কখনো ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিবেন না। শুধুমাত্র চেষ্টা করুন উন্নতি করার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য, যা আপনাকে জয়ী হতে সাহায্য করবে।

কিভাবে বড় চিন্তাধারা করা যায়

নিজেকে মুল্যহীন করে তুলবেন না। নিজেকে আত্ন অনুশোচনায় ভুগতে দেবেন না। নিজের লক্ষ্যের উপর অনড় থাকুন। আপনি আবশ্যই উত্তম যা আপিনি চিন্তা করেন এর থেকেও। ইতিবাচক শব্দগুলো মস্তিষ্কে সবসময় বাজান। নেতিবাচক শব্দগুলো, যেমনঃ হবেনা, পারবোনা, সম্ভব না ইত্যাদি শব্দগুলো মন থেকে বাদ দিয়ে দিন। নিজেকে অপরের কাছে মুল্যবান করে তুলুন। 

পড়ুন এটি দ্য সিক্রেট নামক এই মাস্টারপিস বইটি আপনাকে কি দিতে পারে? জানুন

পরিশেষে 

মহান এই বইটির শিক্ষার কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই লেখাটি আপনাকে বইটি পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্ববিখ্যাত এই বইটি যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সাজেস্ট করবো বইটি পড়ার জন্য।

Leave a Comment