চুলের যত্ন
চুলের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন-
১. তৈলাক্ত চুল।
২.রুক্ষ চুল।
৩.স্বাভাবিক চুল।
প্রথমে আসুন জেনে নেই সবধরনে চুলের যত্ন করতে যা করণীয়

(১). সবসময় চিরুনি ও ব্রাশ পরিষ্কার রাখবেন।
(২). অন্যের চিরুনি ও ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
(৩). চুলকে সুন্দর, উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত চুল আচঁড়াবেন। এতে চুলে আটকে থাকা ধুলোবালি ও মরা চুল দূর হবে।এবং চুল আচঁড়ালে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বেড়ে পুষ্টি যোগায়।
(৪). খুব ঘন ঘন চুল ছাঁটবেন না।দেড় মাস বা দুই মাস পর পর চুল ছাঁটবেন।
(৫). চুলের আগা ফাটলে ছেঁটে ফেলবেন।
(৬). চুল খুব শক্ত কিংবা টান টান করে বাধঁবেন না। চুলের যত্ন এদিকে নজর রাখবেন।
(৭). চুলের যত্নে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন।
(৮). অতিরিক্ত সূর্যের আলো চুলের জন্য খারাপ অর্থাৎ চুলের যত্ন নিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এর হাত থেকে চুলকে রক্ষা করবেন।
(৯). বাহির থেকে এসে চুল ব্রাশ করবেন যাতে চুলে ধুলোবালি জমতে না পারে।
(১০). খাবারের সাথে সবসময় ভিটামিন-‘এ’, ভিটামিন-‘সি’,ও ভিটামিন-‘বি’ কমপ্লেক্স রাখবেন। এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং চুল অকালে পাকবে না।
(১১). সর্বোপরি বজ্রাসনে বসে ছোটবেলা থেকেই প্রত্যেকদিন ১০০ বার চুল ব্রাশ করবেন। এতে চুল অকালে পাকবে না এবং চুলে খুশকি হবে না।
(১২). সপ্তাহে দুদিন মাথা পরিষ্কার করবেন।এছাড়াও চুল অপরিষ্কার মনে হইলেই ধুয়ে নেবেন।
এখন জানা যাক কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়

(১). পেঁয়াজের রস
আমরা হয়ত অনেকেই জানি না পেঁয়াজ দিয়েও চুলের যত্ন নেওয়া যায়।পেঁয়াজের রস চুলের এক মহৌষধ। চুলের খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের রসের জুড়ি নেই। এমনকি পেঁয়াজের রস মাথায় ঘষলে নতুন চুল গজায়।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
পরিমানমতো কয়েকটি পেঁয়াজ নিয়ে থেঁতো করে রস বের করে নেন।তারপর সম্পূর্ণ মাথায় বিলি কেটে তেল দেওয়ার মতো করে চুলে ও মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস মেখে নেন।ঘন্টাখানেক রেখে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেন।দেখবেন চুল শুকালে রেশমের মতো ফুরফুরে হয়ে উঠেছে।
(২). মসুর ডালের বেসন
চুলের পরিমাণ বুঝে মসুর ডাল ধুয়ে একটি পাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর শিলপাটায় বেটে নিন।পানি মিশিয়ে পেস্টের মতো করে চুলে দিয়ে দিন।ঘন্টাখানেক রেখে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নেন। চুল শুকালে আঁচড়ে ফেলুন। দেখবেন চুল ঝরঝরে ও মসৃণ হয়ে গেছে। চুল ধোঁয়ার পর কন্ডিশনার হিসেবে লেবু পানি চুলে দিতে পারেন। এতে চুলের খুশকিও দুর হবে।
(৩). চায়ের লিকারের সাথে পাতি লেবুর রস
চায়ের লিকারের সাথে পাতি লেবুর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।মাথা ধোয়ার পর এই লিকারের পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিবেন।এতে চুল পরা কমবে এবং চুল চকচকে থাকবে।
(৪). দুর্বাঘাস ও নারকেল তেল
একমুঠো দুর্বাঘাস খাঁটি নারকেল তেলের মধ্যে সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরদিন এ তেল রোদে ভালোভাবে গরম করে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে লাগাবেন। এতে চুল ঘন হয়।
(৪). শুকনো আমলকি
শুকনো আমলকি চার /পাচঁ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন। নরম হয়ে গেলে বেটে পেস্টের মত করে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে ভালোভাবে মেখে নিন। একঘন্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। আমলকির সাথে কয়েকটা মেহেদীর পাতাও দিলে খুব ভালো হবে।এতে চুল খুব ভালো থাকে।
(৫). তেঁতুল
চুলের পরিমাণ অনুযায়ী তেঁতুল নিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে ঘন পেস্টের মতো বানিয়ে চুলে দিয়ে দিন। এরপর ১০/১৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে মাথা ধুয়ে নিন।দেখবেন চুল ফুরফুরে, নরম ও সিল্কি হয়ে গেছে।
(৬). সর্ষের খৈল
পরিমানমতো সর্ষের খৈল নিয়ে পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে সেই পানি মাথায় ভালোভাবে তেলের মতো করে চুলের মধ্যে লাগিয়ে নেন। তারপর গোসলের সময় মাথা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। ভালোভাবে ধুয়ে চুল শুকিয়ে নেন।দেখবেন চুল ঝরঝরে হয়ে বেশ ফুলে উঠছে।তৈলাক্ত চুল হলে এক টুকরো লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে নিতে পারেন। খৈল দিয়ে চুল ধুলে চুলে খুশকি হয় না।
(৭). ডিম দিয়ে চুলের যত্ন
ডিমের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন যা আমাদের চুলের গোড়ায় পৌঁছে চুলকে দ্রুত লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করে এবং চুল ভেঙ্গে যাওয়া ও পরে যাওয়া থেকে রোদ করে।
প্রস্তুত প্রণালীঃ- প্রথমে একটি ডিম নিয়ে নিন।এরপর ডিমের সাদা এবং হলুদ অংশ দুটি নিয়েই এর সাথে এক চামচ অলিভ ওয়েল ও এক চামচ নারকেলের তেল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নেন।তারপর চুল ও মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল শুকালে দেখবেন চুল অনেকটা সিল্কি হয়ে গেছে।
আর যাদের রুক্ষ চুল তারা শুধু ডিমের সাদা অংশ বাদ দিয়ে অন্য উপকরণ গুলো ব্যবহার করবেন।
চুলের যে সমস্যাগুলি প্রায় সবার ক্ষেত্রে দেখা যায় যেমনঃ-(ক) চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, (খ) চুলের খুশকি হওয়া, (গ) চুলে উকুন হওয়া। এগুলা থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যাবে এবার আাসুন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাকঃ
(ক). চুলের ডগা ফেটে গেলেঃ
চুলের ডগা ফেটে গেলে বুঝবেন চুলের সর্বনাশ হয়েছে।কাজেই ডগা ফেটে গেলে চুল ছেঁটে ফেলবেন। এছাড়া কোন উপায় নাই।তা না করলে চুল আার বাড়বে না।ধৈর্য ধরে চুল ব্রাশ করবেন। সূর্যের আলো থেকে চুলকে নিরাপদে রাখবেন। এছাড়াও নিয়মিত খাবারের মধ্যে ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাবার রাখবেন। তাহলে উপকার পাবেন। যেমন – গাজর,আমড়া, আমলকি,পেরায়া, লেবু বেশি বেশি খাবেন। তাহলে চুল ও ত্বক সুন্দর থাকবে।আর নিয়মিত তেল মালিশ করবেন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন। তেল দেওয়ার আগে অবশ্যই তেল উষ্ণ গরম করে নিবেন।এভাবে নিয়মিত চুলের যত্ন নিবেন।
(খ). মাথায় খুশকি হলে যা করবেঃ
চুল ধোয়ার আগে তেল গরম করে মাথায় মালিশ করে তারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি নিংড়ে মাথায় ১০/১৫ মিনিট জড়িয়ে রাখবেন। তারপর খুশকির দূর করার শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করে নিবেন। এছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করতে পারেন।যেমন- কাঁচা পেঁয়াজের রস মাথায় ভালোভাবে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে। তারপর ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন। এভাবে কিছুদিন করার পর খুশকি দূর হয়ে যাবে।আর সবসময় নিজের চিরুনি ও ব্রাশ করবেন। কখনো অন্যের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
(গ). চুলে উকুন হলে কি করবেনঃ
উকুন হলে চুলের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি অস্বস্তিকরও।উকুন এমন একটা জিনিস যা একজনের মাথা থেকে আরেকজনের মাথায় ছড়ায়। এরা মাথার ত্বকের উপর বাস করে। এর চিকিৎসা খুব সহজ।বাজারে উকুননাশক সাবান ও শ্যাম্পু পাওয়া যায়।এ দিয়েও আপনি উকুন দূর করতে পারেন।
এছাড়াও –
১).পাচঁ গ্রাম ডিডিটির সঙ্গে আড়াই আউন্স ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে একটা চূর্ণ তৈরি করে রাতে শোবার আগে চুলের উপর বেশি করে দিয়ে একটা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। পরের দিন চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াতে হবে। এভাবে দুই থেকে তিন ঔষুধ প্রয়োগ করলে উকুন মরে যাবে।
২).নারকেল তেলের সাথে ন্যাপথালিন গুড়ো করে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে দেবেন। তারপর মাথা ধুয়ে ফেলুন।এভাবে কয়েক দিন লাগানোর পর উকুন মরে যাবে।
৩).প্রাকৃতিক উপায়েও উকুন দূর করা সম্ভব। যেমন- তুলসী পাতার রস উকুন নিধনে উপকারী। এর রস মাথায় বিলি কেটে ঘন্টাখানেক রেখে পরে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৪).ধুতরা পাতার রস, পানের রস ও কপূর একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগলে উকুন মরে যাবে। এরপর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
মনে রাখবেন চুল নারীর সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অঙ্গ। একে অবহেলা করা উচিত নয়।তাই চুলকে সজীব ও সুন্দর রাখার জন্য অবশ্যই নিয়মিত চুলের যত্ন নিবেন।