এক্স-রে
এক্স-রে শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত একটি শব্দ আমরা সচরাচর অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে এক্স-রে ব্যবহার করি। উইল হেলোম রন্টজেন ১৮৮৫ সালে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন একধরণের রশ্নি আবিষ্কার করেন। যেটি শরীরের মাংশপেশীর ভেদ করে গিয়ে ফটোগ্রাফিক প্লেটে ছবি তুলতে পারতো। এই রশ্নির প্রকৃতি তখন জানা ছিলনা বলে তার নাম দেওয়া হয়েছিল এক্স-রে। এক্স-রে হচ্ছে আলোর মতোই বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ, তবে এর তরঙ্গ দৈর্ঘ আমাদের পরিচিত দৃশ্যমান আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ ছোট তাই এর শক্তিও সাধারণ আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি। যেহেতু অনেক ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ তাই আমরা খালি চোখে এক্স-রে দেখতে পায়না।
এক্স-রে কাকে বলে

এক্স-রে হচ্ছে একধরণের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা সাধারণ আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ ছোট এবং কয়েক হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে। একটি গোলকের দুই পাশে দুটি ইলেক্ট্রোড থাকে। এই ইলেক্ট্রোডের একটিকে উত্তপ্ত করে বিদ্যুৎ এর ভোল্টেজকে কাজে লাগিয়ে এক্স-রে তৈরি করা হয়।
এক্স-রে কিভাবে কাজ করে?

একটি কাচের গোলকের উভয় পাশে দুটি ইলেক্ট্রোড থাকে। একটি ক্যাথোড অন্যটি অ্যানোড। ক্যাথোডটি টাংস্ট্যান এর তৈরি, এর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করে সেটি উত্তপ্ত করা হয়। তাপের কারণে ফিলাম্যান্ট থেকে ইলেক্ট্রন মুক্ত হয় এবং অ্যানোডের ধনাত্নক ভোল্টেজের কারণে এটি তার দিকে ছুটে যায়। ক্যাথোড এবং অ্যানোডের ভেতরে যত বেশি ভোল্টেজ হবে ইলেক্ট্রন তত বেশি গতি শক্তিতে অ্যানোডের দিকে ছুটে যাবে। এক্স-রে টিউবে এই ভোল্টেজ ১০০ হাজার ভোল্টের কাছাকাছি হতে পারে। ক্যাথোড থেকে প্রচন্ড শক্তিতে ছুটে আসা ইলেক্ট্রন গুলো আঘাত করে অ্যানোডকে। এই শক্তিশালী ইলেকট্রনের আঘাতে অ্যানোডের পরমানুর ভেতরে দিকের কক্ষপথের থাকা ইলেক্ট্রন কক্ষপথচ্যুত হয়। তখন বাহিরের দিকে কক্ষপথের কোনো একটি ইলেকট্রন সেই জায়গাটা পূরণ করে। এর কারণে যে শক্তিটুকু উদ্বৃত্ত হয়ে যায় সেটি শক্তিশালী এক্স-রে হিসেবে বেড় হয়ে আসে। ঠিক কত তরঙ্গ দৈর্ঘের এক্স-রে বের হবে সেটি নির্ভর করে অ্যানোড হিসেবে কোন ধাতু ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর। সাধারণত অ্যানোড হিসেবে তামা কে ব্যবহার করা হয়।
কি কি রোগ নির্ণয় করা যায়?
এক্স-রে কাজ কি ?

এক্স-রে অনেকভাবে ব্যবহার করা যায়, নিচে তার কয়েকটি ব্যবহারের তালিকা দেওয়া হলঃ
- স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড় ইত্যাদি সনাক্ত করার ক্ষেত্রে।
- দাতের ক্যাভিটি এবং অন্যান্য ক্ষয় বের করার জন্য এক্স-রে ব্যবহার করা হয়।
- পেটের এক্স-রে করা হয় অন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করার ক্ষেত্রে।
- এক্স-রে দিয়ে পিত্তথলির ও কিডনিতে পাথরের অস্তিত্ব বের করা যায়।
- ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ যেমন যক্ষ্মা, নিউমনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় করা যায় বুকের এক্স-রে করার মাধ্যমে।
- ক্যান্সার কোষকে মারার ক্ষেত্রে এক্স-রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এক্স-রে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে পারে। তাই এটি রেডিও থেরাপিতে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এক্স রে এর ক্ষতিকর দিক

এক্স-রে এর বিকিরণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এক্স-রে এর অপ্রয়োজনীয় বিকিরণ যেন শরীরের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এজন্য কোনো রোগীর এক্স-রে নেওয়ার সময় এক্স-রে করা অংশটুকু ছাড়া বাকি শরীরের সিসার তৈরি অ্যাপ্রোন দিয়ে ঢেকে নিতে হয়। অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে গর্ভবতী মেয়েদের পেট বা তলপেটের অংশটুকু এক্স-রে না করাই ভাল।
এক্স-রে এর খরচ
এক্স-রে করতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম খরচ। বিভিন্ন ধরনের এক্স-রে রয়েছে। এক্স-রে ভেদে বিভিন্ন স্থানে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুন

বর্তমানে ক্লাস ১০ অধ্যয়নরত, বেপজা পাবলিক স্কুল এবং কলেজ। ভবিষ্যত ডাক্তারনী, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।