আইসোটোপ
আইসো মানে একই, টোপ মানে পারমানবিক সংখ্যা।
কয়েকটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা একই থাকে, তাদের নিউট্রন সংখ্যা এবং ভরসংখ্যা ভিন্ন।
আইসোটোপ কাকে বলে ?
কোন মৌলের ভিন্ন ধরনের পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা সমান। কিন্তু তাদের ভরসংখ্যা আলাদা। এই দুই বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট যেসব পরমাণু রয়েছে, তাদের একে অন্যের আইসোটোপ বলা হয়।
অর্থাৎ, একই পারমানবিক সংখ্যা, কিন্তু ভিন্ন ভরসংখ্যা বিশিষ্ট একই মৌলের পরমানু সমূহ একে অপরের আইসোটোপ বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন, ডিউসংক্যটেরিয়াম এবং ট্রিটিয়াম তারা যদিও একই মৌল। তারা হাইড্রজেনের অংশ। সবাই হাইড্রজেন মৌল। কিন্তু তাদের ভর সংখ্যা ভিন্ন। তারা একে অপরের আইসোটোপ।

একটি মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। কিন্তু একটি মৌলের সকল পরমাণুর ভর এক নাও হতে পারে। কারণ মৌলের পরমাণুতে বিভিন্ন সংখ্যায় নিউট্রন থাকতে পারে।
মনে রাখার কৌশল
আইসোটোপের সর্বশেষ শব্দ ‘প’। ‘প’ থেকেই পারমানবিক সংখ্যা। অর্থাৎ আইসোটোপের ক্ষেত্রে পারমানবিক সংখ্যা একই হবে।
আইসোবার: এখানে সর্বশেষ শব্দ বার মানে ভর মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ আইসোবারের ভরসংখ্যা একই থাকবে।
আইসোটোন: এখানে টোন মানে নিউট্রন ধরা যায়। তাহলে নিউট্রন সংখ্যা এক থাকলে, আইসটোন।
আইসোটোপের তেজস্ক্রিয়াতা: আমরা আগেই জেনেছি, ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে।
কোন পরমানু অনেক বড় হয়ে গেলে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু কণা ভেঙে বের করে দেয়। সাধারণত যেসব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা বা পারমানবিক সংখ্যা অনেক বেশি, যা ৮২ এর উপরে। তাদের ক্ষেত্রে কিছু অংশ অর্থাৎ পরমানু থেকে কিছু অংশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বের করে দেয়। এই কিছু অংশ প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন, অথবা কিছু এনার্জি বা শক্তি হতে পারে।
আইসোটোপ এর ব্যবহার
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এর ব্যবহার
চিকিৎসা ক্ষেত্রে:
আমাদের দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত দুইভাবে ব্যবহার করা হয়। রোগ নির্ণয় এবং রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। নিচে এর ব্যবহার আলোচনা করা হলো:

ক. শরীরের হাড় বেড়ে গিয়ে, শরীরের কোথাও ব্যাথা হচ্ছে এবং কেন ব্যাথা হচ্ছে, সেটা নির্ণয়ের জন্য Tc-99m দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে হাড়ের কোথায় ব্যাথা হচ্ছে সেটা নির্ণয় করা যায়। 99m Tc থেকে রশ্মি নির্গত হয়ে 99 Tc আইসোটোপ উৎপন্ন হয়।
খ. 153Sm অথবা 89Sr ব্যবহার করে হাড়ের চিকিৎসা করা হয়।
গ. টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় এবং নিরাময় করতে আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়। 60Co থেকে নির্গত রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়।
ঘ. 131I থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ বৃদ্ধি রোধ করে।
ঙ. 32P এর মাধ্যমে রক্তের নিউকোমিয়া রোগের চিকিৎসা করা হয়।
চ. হার্টে পেইসমেকার বসাতে Plutonium-238 (238Pu) ব্যবহার করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার

আমাদের দেশে তেজস্ক্রিয়া রশ্মি ব্যবহার করে, নতুন নতুন উন্নত বীজ উদ্ভাবন, অধিক ফলন ফলানো হয়। উদ্ভিদের মূলে Phosphorus-32 (32P) যুক্ত ফসফেট দ্রবণ সূচিত করা হয়।
খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে
কাচা শাক-সবজি, ফলমুল সংগ্রহের জন্য আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। Cobalt-60 (60Co) থেকে তৈরী হওয়া গামা রশ্মি খাবারে তৈরী হওয়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, খাবারকে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখে। কোন পোল্ট্রি ফার্মে ব্যাকটেরিয়া উদ্ভব হলে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে
আইসোটোপ ক্ষয়েত সময় প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। সেই তাপশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। আমাদের দেশেও কাজ চলমান।
আইসোটোপের ক্ষতিকর প্রভাব

অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়ার প্রভাবে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এটাকে কাজে লাগিয়ে পারমানবিক বোমাও তৈরী করা হয়। যা জনজীবনের জন্য ক্ষতিকারক। পারমানবিক বোমার প্রভাবে হিরোসিমা এবং নাগাসিকার কথা সবারই জানা।
আরো পড়ুন লাফিং গ্যাস কিভাবে হাসায় !

পাঠক, লেখক, ইতিবাচক চিন্তাবিদ, আশাবাদী, সংগঠক, দেশপ্রেমিক।